Image description

বাংলাদেশের ফার্নিচার শিল্প এক কঠিন সংকটের মুখে পড়েছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশের অস্থিরতা মিলিয়ে এ খাতে বেচাকেনায় নেমে এসেছে ভয়াবহ ধস। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বিক্রি কমে গেছে প্রায় অর্ধেক। বিশেষ করে সরকারি ও করপোরেট পর্যায়ের ক্রয় কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান এখন দৃশ্যমান।

রাজধানীর বেগম রোকেয়া সরণির ফার্নিচার পল্লীর বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে বেচাকেনা কার্যত স্থবির হয়ে গেছে।

‘কালাম ফার্নিচার’-এর সিনিয়র সেলস পার্সন রহমতুল্লাহ বলেন, ‘আগে মাসে চার-পাঁচ লাখ টাকার ফার্নিচার বিক্রি হতো, এখন টেনেটুনে দুই লাখও হয় না। এমনকি ঈদের মতো মৌসুমেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ৩০ বছর ধরে ফার্নিচার বিক্রি করি, বুঝতে পারি নির্বাচনের আগ দিয়ে এমন হয়। এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। দেশে নির্বাচিত সরকার এলে তখন আশা করি কাস্টমার বাড়বে।’

Furniture-01ছবি: মেঘনা এক্সিকিউটিভ হোল্ডিংসের সৌজন্যে

দামের কারণে ক্রেতারা এখন সেগুন কাঠের বদলে বিভিন্ন বোর্ড ও কম দামি উপকরণের ফার্নিচারেও আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে জানান ‘দ্য ন্যাশনাল ফার্নিচার’-এর ম্যানেজার মোহাম্মদ শাজাহান।

তিনি বলেন, ‘আগে মানুষ ঢাকায় এসে ভালো সেগুন কাঠের ফার্নিচার কিনতো। এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় দোকান আছে, মানুষ আর ঢাকামুখী হয় না। মাসে ২০ লাখ টাকা বিক্রি হতো, এখন তা নেমে এসেছে ৮ লাখে। তাছাড়া দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তায় মানুষ খরচ করতে সাহস পাচ্ছে না।’

শুধু শোরুম নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওয়ার্কশপভিত্তিক ফার্নিচার কারখানাগুলোর কর্মচাঞ্চল্যও। মিরপুর ১১ নম্বরের ‘আয়শা ফার্নিচার’-এর মালিক নয়ন মিয়া জানান, ‘আগে চারজন কর্মচারী কাজ করতো। অর্ডার জমা পড়ে থাকতো। এখন মাত্র দুই জন আছে। অর্ডারই নেই তেমন। দিন দিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান এবং ওমেগা ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী শেখ আব্দুল আউয়াল জানান, ‘বর্তমান পরিস্থিতি করোনাকালকেও ছাড়িয়ে গেছে। আগেও মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের সময় কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল, কিন্তু তখনও মানুষ কিনতো। এখন তো কাস্টমারই আসে না। নিরাপত্তাহীনতা আর অস্থিরতায় মানুষ টাকা নিয়ে বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছে। নতুন কোনও করপোরেট প্রতিষ্ঠান চালু হচ্ছে না, উদ্যোক্তাও তৈরি হচ্ছে না। ফলে ফার্নিচারের চাহিদা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের কাছেও ভরসার জায়গা সংকুচিত হয়েছে।’

Furniture 02ছবি: মেঘনা এক্সিকিউটিভ হোল্ডিংসের সৌজন্যে

কামাল ফার্নিচারে আসা ক্রেতা আমিন হোসেন বলেন, ‘বাড়ির জন্য কয়েকটি আসবাব প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি বুঝে এখন শুধু একটা সোফা নিচ্ছি। এই সময়ে অতিরিক্ত খরচ করার আগে ১০ বার ভাবতে হয়। ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা।’