Image description

জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সারা দেশের ১৬টি কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে পাঁচটি কারাগারে বড় ধরনের হামলা করে বিক্ষুদ্ধ জনতা। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর এটি একটি বিরল ঘটনা।

হামলার সময় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ সময় এসব কারাগার থেকে প্রায় আড়াই হাজার হাজতি ও কয়েদি পালিয়ে যান। ৫ আগস্টের পর এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৯০০ বন্দি ফিরে এসেছেন। তবে এখনো ৬২০ জন লাপাত্তা।

পালিয়ে যাওয়া আসামিদের মধ্যে ৮৪ জন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত। পারিবারিক হত্যাকাণ্ড, রাজনৈতিক সহিংসতা, অস্ত্র চোরাচালান ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন তারা। কারা কর্তৃপক্ষের ধারণা, এসব ফাঁসির আসামি ভারতে পালিয়ে যেতে পারেন।

সূত্র জানায়, হামলার সময় এই ফাঁসির আসামিরাই কারাগারের মধ্যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। এখন পর্যন্ত ৬২০ জন পলাতক রয়েছেন। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ৯ জঙ্গি এবং বিডিআর হত্যাকাণ্ডের চার আসামি রয়েছেন।

কারাগারের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, যেসব কয়েদি ও হাজতি কারাগারে স্বেচ্ছায় ফিরে এসেছেন, তাদের সাজা কমানো যায় কি না সে বিষয়টি ভেবে দেখছে কারা কর্তৃপক্ষ। আবার অনেক বন্দি হামলার ভয়ে বেকায়দায় পড়ে কারাগার থেকে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিছু বন্দি কারাগারে হামলা ঠেকাতে কারারক্ষীদের সহযোগিতা করেছেন। তাদের সাজা মওকুফের বিষয়টি আলোচনায় আছে।

এদিকে জেল থেকে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কারণ, পলাতক ব্যক্তিরা দেশবিরোধী নাশকতায় জড়িয়ে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় অনেক কারারক্ষী নিরাপত্তার ভয়ে কারাগার ছেড়ে চলে যান। এতে কারাগারের নিরাপত্তা বলয় ভেঙে পড়ে। কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশের এই ৬৮টি কারাগারে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা এখন আগের চেয়ে নিরাপদ।

এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) ও কারা মুখপাত্র জান্নাত-উল-ফরহাদ আমার দেশকে বলেন, এখনো প্রায় ৬২০ জনের মতো হাজতি ও কয়েদির হদিস নেই। এদের আবার গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।

কারা অধিদপ্তর জানায়, গত বছরের ১৯ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ওই কারাগারে প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে কারারক্ষীরা গুলি ছুড়লেও হামলাকারীরা তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। হামলাকারীরা কারাগারের ভেতরে অগ্নিসংযোগ করে, লুট করা হয় কারারক্ষীদের অস্ত্র। এ সময় কারারক্ষীরা সেখান থেকে চলে যান।

সূত্র জানায়, একপর্যায়ে ওই কারাগার থেকে প্রায় ৮২৫ জন বন্দি পালিয়ে যান। এ ছাড়া গত ৫ আগস্ট সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। একই দিন শেরপুর জেলা কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে প্রায় ৫৮০ জন বন্দি পালিয়ে যান। গত ৬ আগস্ট হামলার ঘটনা ঘটে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। এ ছাড়া ৭ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। সেখান থেকে ৫৫ জন বন্দি পালিয়ে যান।

সূত্র জানায়, দেশের ১৬টি কারাগারে হামলার ঘটনায় প্রায় ৯৪টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে বিভিন্ন অভিযানে ৬৯টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে এখনো ২৫টি অস্ত্রের হদিস মেলেনি। তবে অস্ত্রগুলো দ্রুত উদ্ধার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ করে জেল থেকে পলাতক জঙ্গিদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখনো ৯ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তারা হলেনÑআব্দুল মালেক, আব্দুল মতিন, আজিজুর রহমান পলাশ, আমির হোসেন, নুরে আলম, নাছির হোসেন, জাহাঙ্গীর শওকত জুয়েল, সাগর আহম্মেদ ও মহিউদ্দিন নাইম।

সূত্র জানায়, পলাতক ব্যক্তিদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতোমধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষ এসব বন্দির নামসহ পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দেশের বিমানবন্দর ও সব স্থলবন্দরে পাঠিয়েছে, যাতে তারা বিদেশে পালাতে না পারে।