
মালয়েশিয়ায় বহুল আলোচিত কলিং ভিসায় শ্রমিক নিয়োগের নামে প্রতারণার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংস্থা তেনাগানির সহযোগিতায় শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করেন প্রতারণার শিকার ৭৪ বাংলাদেশী শ্রমিক। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর দেশটির অভিবাসী শ্রম আদালত (জেটিকে) ক্ষতিগ্রস্থ ৭৪ বাংলাদেশী কর্মীকে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ক্ষতি পূরণ দেয়ার এ নির্দেশনা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) রাত ৯টায় দেশটির প্রায় বেশিরভাগ জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। আদালতের রায় অনুযায়ী- নিয়োগকর্তার কাছ থেকে বকেয়া মজুরি এবং তাদের কর্মসংস্থান চুক্তি অনুযায়ী এক দশমিক ৫৪ মিলিয়ন রিঙ্গিত (প্রায় ৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা) পাচ্ছেন তারা।
মূলত এসব বাংলাদেশীকে মালয়েশিয়ায় নিয়ে কোনো কাজ বা মজুরি দেয়া হয়নি। এমনকি তাদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে স্থায়ী কোনো আবাসন ব্যাবস্থা না করে অস্থায়ীভাবে একটি ভাড়া করা হোস্টেলে মানবেতরভাবে রাখা হয়েছে।
শ্রম আদালত (জেটিকে) মেরান্তি বিনামাস এসডিএন বিএইচডিকে এই ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা দেন। অভিবাসী মানবাধিকার সংস্থা তেনাগানিতার মাধ্যমে এসব বাংলাদেশী অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
অনেকেই এই রায়কে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক রায় বলে মন্তব্য করেছেন। এক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্থা তেনাগানিতার কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ ইসমাইল বলেন, অভিবাসীদের অধিকার আদায়ে এটি একটি বড় জয়। যা বিদেশী কর্মীদের অধিকার লঙ্ঘনের জন্য নিয়োগকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অভিযুক্ত শ্রমিক নিয়োগ কোম্পানি মেরান্তি বিনামাসকে বকেয়া অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে শ্রম বিভাগ স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, নিয়োগকর্তারা দায়মুক্তি ছাড়াই শ্রমিকদের শোষণ করতে পারবেন না।
মানবাধিকার সংস্থা তেনাগানিতা বলছে, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে তেনাগানিতার একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এটি আরেকটি নজির স্থাপন করে যে, শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ন্যায়বিচার দাবি করলে এমনকি বৃহৎ, আপাতদৃষ্টিতে অস্পৃশ্য কোম্পানিগুলোকেও জবাবদিহি করতে হতে পারে। এ মামলায় মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল, অভিবাসন মহাপরিচালক এবং সরকারকে বিবাদি করা হয়েছে। গত মার্চ মাসে দায়ের করা এ মামলা এখনো চলমান রয়েছে।
ভুক্তভোগী বাংলাদেশী কর্মীরা মালয়েশিয়ায় কাজের জন্য সবাই ২৫ হাজার রিঙ্গিত যা বাংলাদেশী টাকায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ প্রদান করেছিলেন। কিন্তু দেশটিতে পৌঁছানোর পর তাদের কোনো কাজ বা মজুরি দেয়া হয়নি। বরং তাদের কুয়ালালামপুরের পুডু এলাকায় এক জনাকীর্ণ হোস্টেলে মানবেতর অবস্থায় রাখা হয়েছিল।
তেনাগানিতা বলছে, এ ধরনের রায় অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি ভবিষ্যতে নিয়োগকর্তাদেরকে শ্রমিকদের শোষণ করা থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করবে।