
নির্মাণাধীন ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণের নামে শেখ পরিবারের দুর্নীতির খোঁজে গণপূর্ত অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি দুদকের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলামের পাঠানো প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে এ চিঠি পাঠায়।
চিঠিতে বলা হয়, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের সাইট প্রজেক্ট গ্রিন সিটি আবাসন পল্লির ২৬০০ কোটি টাকার প্রকল্পের সকল নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়,শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা, টিউলিপ সিদ্দিকী ও জয়সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণের নামে ৪৯ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। সেইসঙ্গে শেখ হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগও রয়েছে।
গণঅভ্যুত্থান পর থেকেই শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে মেগা প্রজেক্টের নামে অর্থ লুটপাটের বিস্তর দুর্নীতির ফিরিস্তি জমা পড়তে থাকে দুদকে। গেল বছরের ডিসেম্বরে ৯ মেগা প্রজেক্ট থেকে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে সংস্থাটি। এর মধ্যে অন্যতম ছিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
বুধবার (১৮ জুন) দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা, টিউলিপ ও সজীব ওয়াজেদ জয়সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণের নামে ৪৯ হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং শেখ হাসিনা ও জয়ের বিরুদ্ধে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুসন্ধানে রূপপুরের সাইট প্রজেক্ট গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীর ২৬০০ কোটি টাকার প্রজেক্টের সব নথিপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক।
সূত্র জানায়, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে ৯ প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। এসব প্রকল্পের নথিপত্র চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প, মিরসরাই বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন, মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্প।
দুদক সূত্র থেকে জানা যায়, এসব প্রকল্পের প্রস্তাব/প্রাক্কলন, অনুমোদিত প্রস্তাব/প্রাক্কলন, বাজেট অনুমোদন, বরাদ্দ, অর্থ ছাড়করণ, ব্যয় অর্থের পরিমাণ ও এই সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র এবং এসব প্রকল্প নিয়ে কোনো তদন্ত হয়ে থাকলে প্রতিবেদন ও প্রকল্প সময়ের পৃথক সারসংক্ষেপ কপি চাওয়া হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের দেশে-বিদেশে লেনদেনের যাবতীয় নথি তলব করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে চিঠি দেয় দুদক। একই সঙ্গে টিম নির্বাচন কমিশন অফিস এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসেও তাদের ব্যক্তিগত নথিপত্র তলব করে চিঠি দিয়েছে বলেও জানা গেছে।
দুদক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ নয়টি প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছিল।
গত ১৫ ডিসেম্বর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা) লোপাটের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। গত ৩ সেপ্টেম্বর এ অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।
রিটে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রিটের বিবাদী করা হয়। দুদকসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি আত্মসাৎ করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এ অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দেয়। যাতে মধ্যস্থতা করেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক। দেশের সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ ধরা হয় এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। যাতে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাটম। নিজের ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এ চুক্তি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ রেহানা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য।