Image description

সরকারি চাকরি আইন লঙ্ঘন করে গেলো বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করে সরাসরি আওয়ামী লীগের পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ের ৩৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।

 

এদের মধ্যে ১৯ জনকে আগামী মঙ্গলবার অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। যার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উইংয়ের পরিচালক কাজী মো. আবু কাইয়ুম। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি এসব কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগের পক্ষে স্লোগান দেন। সেই বিক্ষোভ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বিষেদাগার করা হয়। ওই বিক্ষোভমিছিলে নেতৃত্ব দেন শিক্ষা ক্যাডারের ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তা মুকিব মিয়া। যিনি পরে আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। তবে অন্যদের বিরুদ্ধে এখনো প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, গতবছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘এ যুগের রাজাকার’ বলে মন্তব্য করেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এর পরপরই বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা ৩ আগস্ট চট্টগ্রামে নওফেলের বাসভবনে হামলা চালায়। এই হামলার প্রতিবাদে ৪ আগস্ট শিক্ষাভবনে বিক্ষোভ করেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কয়েকজন কর্মকর্তা। বিক্ষোভকালে তারা স্লোগান দেন, ‘চলছে লড়াই চলবে, শেখ হাসিনা লড়বে’, ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘দালাল-বদর-রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’,
‘ঘাপটি মারা দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আমার মাটি, আমার মা, পাকিস্তান হবে না’, ‘শিক্ষামন্ত্রীর (নওফেল) বাসায় হামলা কেন, খুনি খালেদা জবাব দে’। বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। 

এই মিছিলে অংশ নেয়া ৩৭ জন ক্যাডার কর্মকর্তারা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন। তাদের অনেকেই অতীতে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য রয়েছে।

শেখ হাসিনার দেশত্যাগের আগের দিন এই বিক্ষোভ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ওই দিনের মিছিলে নেতৃত্ব দেন শিক্ষা ক্যাডারের ৩১তম ব্যাচের কর্মকর্তা মুকিব মিয়া, যিনি পরে আওয়ামী লীগের লিফলেট বিতরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। তবে অন্যরা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। অবশেষে, দীর্ঘ ১০ মাস পর এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রশাসন। ইতোমধ্যে ১৯ জন কর্মকর্তাকে আগামী ২৪ জুন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। সেদিন শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা তাদের আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন— কে, কার নির্দেশে এই মিছিলে অংশ নিয়েছিল, নেপথ্যে কারা ছিল, তা জানা হবে।

সরকারি চাকরির বিধিবিধান ভেঙে এমন নজিরবিহীন মিছিলে অংশ নেয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষা ক্যাডারের অন্যান্য কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এই ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ক্যাডার সার্ভিসকে কলঙ্কিত করেছে।

জানা গেছে, ৪ আগস্ট শিক্ষাভবনে স্লোগান দেয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে ডিআইএ-এর কয়েকজন কর্মকর্তা ছিলেন, যাদের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও পরবর্তীতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি—এমন অভিযোগও রয়েছে।