
ঈদের পর মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে ময়মনসিংহ জেলায় অন্তত সাতটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ৮ জুন থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত এসব হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই তুচ্ছ কারণ, হঠাৎ রাগ কিংবা পারিবারিক কলহের জেরে ঘটেছে।
জানা যায়, গত সোমবার (১৭ জুন) রাত ১০টার দিকে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি মোড় এলাকার একটি বাড়ির সেফটিক ট্যাংক থেকে নবম শ্রেণির স্কুলছাত্র আবু রায়হানের (১৬) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে উপজেলার হরিণাদি গ্রামের বাসিন্দা।
পরিবারের দাবি, প্রতিবেশী এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কারণে রায়হানকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মেয়েটির পরিবার ঘরবন্দি হয়ে পালিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হাদি বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে মেয়েটির পরিবার বাড়িতে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছে। তাই ধারণা করছি, তারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’
এ ছাড়া সোমবার ত্রিশালের হরিরামপুর ইউনিয়নের মাগুরজোড়া এলাকায় হাফিজুর রহমান (২৩) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গত রোববার রাত ১১টার স্থানীয় বাজার থেকে বাড়িতে যাওয়ার কথা থাকলেও পরদিন স্থানীয় একটি ইটভাটায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। পুলিশের ধারণা, ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে হাফিজুরকে হত্যা করা হয়। তবে আপাতত হত্যার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাঈম মিয়া (২৩) নামের এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়। তাকে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে গফরগাঁও উপজেলার টাংগাব ইউনিয়নের দাওয়া দাইর দাখিল মাদ্রাসা মাঠে পূর্ববিরোধের জেরে কুপিয়ে জখম করা হয়।
এ বিষয়ে পাগলা থানার ওসি ফেরদৌস আলম বলেন, চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে নাঈমের বিরুদ্ধে থানায় ছয়টি মামলা আছে। সম্প্রতি এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে জখম করেছিলেন নাঈম। এর জেরেই হয়তো তাকে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে থানায় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এর আগের দিন রোববার ময়মনসিংহ নগরের মাসকান্দা এলাকায় জোবেদা খাতুন (৭০) নামের এক বৃদ্ধার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঈদের দিন থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তিনি ময়মনসিংহ নগরের কেওয়াটখালী মধ্যপাড়া আকন্দবাড়ি এলাকার মৃত সাহেব আলীর স্ত্রী। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হলেও রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়নি বলে জানিয়েছেন ৩ নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল হোসেন।
১৩ জুন জেলার গৌরীপুরে চায়ের ১০ টাকা বিল দেওয়া নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে ছাত্রদলের নেতা হুমায়ুন কবীরকে (২২) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। হুমায়ুন সহনাটী ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার বাড়ি ইউনিয়নের সোনাকান্দি গ্রামে। এ ঘটনায় নিহত যুবকের বাবা আবদুল কাইয়ুম বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় মামলা করেন।
গৌরীপুর থানার ওসি দিদারুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১০ জুন মুক্তাগাছা উপজেলার কুমারগাতা গ্রামে জমিলা খাতুন নামের এক বৃদ্ধাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠে তার নাতি ফেরদৌসের (২২) বিরুদ্ধে। ফেরদৌস মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন বলে পুলিশ ও স্বজনেরা দাবি করেছেন। ঘটনার পরপর ফেরদৌসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
৮ জুন ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর বাজার এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে সাবিনা ইয়াসমিন (৩৫) নামের এক গার্মেন্টসকর্মীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সাবিনা ত্রিশাল উপজেলার কানিহারি ইউনিয়নের তিরখী গ্রামের রুহুল আমীনের মেয়ে। ভালুকা থানার ওসি হুমায়ুন কবীর জানান, সাবিনা ৫০০ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে কুপিয়ে ও মাথা থেঁতলে হত্যা করেন স্বামী স্বপন মিয়া (৩৯)। ১৪ জুন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।
এসব হত্যার ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, সাম্প্রতিক এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনার অধিকাংশই তুচ্ছ কারণে ঘটেছে। পূর্বপরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় হত্যার ঘটনা ঘটছে- এমন নয়, হঠাৎই মাথা গরম করে হত্যার ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে হত্যার ঘটনা রোধে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।