
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হতে না পারা অর্থাৎ ফেল করা প্রার্থীরা সনদের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। রোববার (১৫ জুন) দিনভর বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। তাদের এমন দাবির সঙ্গে একমত নয় এনটিআরসিএ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যোগ্যরাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
প্রার্থীদের দাবি, প্রিলিমিনারি এবং লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা। মৌখিক পরীক্ষাও ভালো দিয়েছেন। পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে ফেল করার কারণ তাদের বোধগম্য নয়। এ জন্য তাদের সনদ দিতে হবে। যদিও এনটিআরসিএ বলছে ভিন্ন কথা। সংস্থাটি জানিয়েছে, অনেক প্রার্থীর ন্যূনতম সাধারণ জ্ঞান ছিল না। এমনকি আরবি প্রভাষক পদে ভাইভা দিতে আসা প্রার্থী আরবি রিডিং পড়তে পারেননি, যে কারণে তিনি ফেল করেছেন।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় মূল ভূমিকা পালন করেছেন এক্সটার্নাল অর্থাৎ বাহির থেকে যারা পরীক্ষা নিতে এসেছিলেন তারা। প্রার্থীদের পাস, ফেল অনেকটা তারাই নির্ধারণ করেছেন। মৌখিক পরীক্ষা এবার তুলনামূলক কঠিন হওয়ায় ফেলের সংখ্যা কিছুটা বেশি।
লিখিত পরীক্ষায় ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে ৮১ হাজার ২০৯ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে চূড়ান্ত ভাবে ৬০ হাজার ৫২১ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। গত ৪ জুন চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। ফল প্রকাশের পর থেকেই ফেল করা প্রার্থীদের একটি অংশ নানা অভিযোগ তুলে ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
১৮তম নিবন্ধনে ফেল করা প্রার্থীদের দাবি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রার্থীদের দাবি লিখিত আকারে জমা নেওয়া হয়েছে। দাবিগুলো আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মন্ত্রণালয় যদি মনে করে, ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করবে তাহলে তারা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমাদের বিধিমালায় ফল পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ নেই। আমরা চাইলেও এ সুযোগ দিতে পারি না।’
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভাইভায় ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে ফেল করানো হয়নি। যারা কিছুই পারেনি, তারাই কেবল ফেল করেছেন। আমরা এমনও দেখেছি, একজন প্রার্থী আরবি প্রভাষক পদে ভাইভা দিয়েছেন, অথচ তিনি আরবি পড়তে পারেন না। আবার লিখিত পরীক্ষায় যে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, মৌখিকে এসে তার উত্তর দিতে পারছেন না। ভাইভায় ২০ নম্বরের মধ্যে ১২ নম্বর সার্টিফিকেটে। আর ৮ নম্বর প্রেজেন্টেশন, প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য নির্ধারিত থাকে। এই ৮ এর মধ্যে যারা ৪ পেয়েছেন তারা পাস করেছেন। ৪ এর কম নম্বরধারী প্রার্থীকে ফেল করানো হয়েছে।’
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে রেকর্ড প্রায় ১৯ লাখ প্রার্থী আবেদন করেন। ২০২৪ সালের ১৫ মার্চ এ নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের ১২ ও ১৩ জুলাই ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্যে স্কুল-২ পর্যায়ে ২৯ হাজার ৫১৬ জন, স্কুল পর্যায়ে ২ লাখ ২১ হাজার ৬৫২ জন এবং কলেজ পর্যায়ে ছিলেন ২ লাখ ২৮ হাজার ৮১৩ জন।
লিখিত পরীক্ষায় ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে ৮১ হাজার ২০৯ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে চূড়ান্ত ভাবে ৬০ হাজার ৫২১ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। গত ৪ জুন চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। ফল প্রকাশের পর থেকেই ফেল করা প্রার্থীদের একটি অংশ নানা অভিযোগ তুলে ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে না পারা প্রার্থী মো. হাবিব বলেন, ‘ভাইভায় ২০ হাজারের বেশি প্রার্থী ফেল করেছে। আগে আমরা দেখেছি, এনটিআরসিএ ভাইভায় ফেল করায় না। সেখানে আমাদের ২০ হাজার প্রার্থীকে ফেল করানো হয়েছে। এনটিআরসিএর কারণে ২০ হাজার জীবন নষ্ট হতে চলেছে। ভাইভায় সব প্রশ্নের উত্তর পারার পরও ফেল করানো হয়েছে। আমরা এর সমাধান চাই।’
আরেক প্রার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, ‘এ শিক্ষক নিবন্ধনে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১৯ লাখ প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। পরে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৪ লাখ ৭৯ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় বসেন। তাদের মধ্য থেকে মাত্র ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আমরা প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছি, আমরা যোগ্য। আমাদের যে ২০ হাজার প্রার্থীকে ভাইভায় অকৃতকার্য করা হয়েছে, আমাদের সকলের দাবি, সকলকে সনদ দিতে হবে ‘