
২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৪৩টি দোকান ও চলাচলের পথে বসানো ১২৭টি অস্থায়ী দোকান পুড়ে যায়। তখন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সরকারের পক্ষ থেকে ৭৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়। এরপর আর কেউ ফিরেও তাকায়নি তাদের দিকে। একই বছরের অক্টোবর মাসে ডিএনসিসির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কৃষি মার্কেট পুনর্নির্মাণ শুরু হয়।
জানা যায়, মার্কেটের কাজ সম্পর্কে ডিএনসিসি অবগত নয় বলে সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম (অতিরিক্ত সচিব) একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেন। তখন তিনি বলেন, সরকারি জায়গায় কেউ মার্কেট করতে পারেন না, এই অধিকার কারো নেই। এ বিষয়ে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।
জানা গেছে, হাসিনা সরকারের পতনের পর মার্কেটের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কাজ এগিয়ে নিতে ঠিকাদার মানিক ও টুটুলের নেতৃত্বে একটি উন্নয়ন কমিটি গঠন করা হয়। যারা দোকান লিজ নিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে বসে তাঁরা এক লাখ টাকা করে দিতে বলেন।
আগুনে পুড়ে যাওয়া সালমা ক্লথ স্টোরের দোকানি লোকমান হোসেন বলেন, ‘আগুনে আমার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। সরকার দিয়েছে মাত্র ৭৫ হাজার টাকা। এরপর আর কেউ একটু খোঁজও নেয়নি। দেখতেই পারছেন একটি টুল পেতে দোকান খুলে বসেছি। ভয়ে আছি নতুন দোকান হলে পাব কি না।’ তিনি আরো বলেন, ‘পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা অনেক কষ্টে আছি। দেখার কেউ নেই। তবু নতুন দোকানের কাজ শেষ হওয়ার জন্য এক লাখ টাকাও দিয়েছি। সেই টাকা কই গেছে কে জানে! এখন দেখি কাজ বন্ধ।’
আরেক দোকানি বলেন, দোকান মালিকরা ক্ষতিপূরণ পেলেও যাঁরা দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতেন, তাঁরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। তাঁরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। খেয়ে না-খেয়ে তাঁদের দিন কাটছে। এই মার্কেটের প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যবসায়ী এখন বেকার। তাঁরা দোকান পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
ডিএনসিসি সূত্র বলছে, অনুমোদন না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যা থাকার কারণে মার্কেটটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে সরেজমিনে নিচতলায় চুপিসারে কাজ চলতে দেখা যায়। টিনের ফাঁক দিয়ে একজনকে দেখে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নাম আকবর। তিন-চার দিন হয় আসছি। ভেতরে নির্মাণকাজ চলে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে হেসে দিয়ে বলেন, না স্যার, ভেতরে কোনো কাজ চলে না। আমরা দুজন মার্কেট পাহারা দিই।
জানা গেছে, মার্কেটের ক-ব্লক পূর্ব পাশের মাছ-মাংস পট্টিতে ৭৪টি দোকান। খ-ব্লক মাঝখানের শেডে ১৩১টি দোকান ও গ-ব্লক দক্ষিণ পাশের শেডে ১১২টি দোকান। এই ৩১৭টি দোকানের মালিক ভাড়াটিয়ারা। আর ১২৭টি দোকানের মালিক ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ, যার মধ্যে সব দোকানই পুড়ে যায়। এর মধ্যে মাছ-মাংস পট্টির ৭৪টি দোকান অক্ষত ছিল।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২০ নভেম্বর কৃষি মার্কেটে ‘মোহাম্মদপুর নতুন কাঁচাবাজার দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতি’র নির্বাহী কমিটি গঠনের জন্য তলবি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নবগঠিত ১৩ সদস্যের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন ঢাকা মহানগর উত্তর ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি মো. মামুন হোসেন। এ ছাড়া মাওলানা আব্দুল হান্নানকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
মামুন হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ফ্যাসিস্টদের সময়েই এই মার্কেটের কাজ শুরু হয়। তবে সরকার পতনের পরে কাজ অনেক দিন বন্ধ ছিল। পরে দোকান মালিকরা মিলে একটি উন্নয়ন কমিটি করেন। ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সব সমস্যার সমাধান করে দ্রুত দোকান বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ডিএনসিসিকে অনুরোধ জানিয়েছি।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘মার্কেটটি নিয়ে যে জটিলতা ছিল তা সমাধান করা হচ্ছে। আমরা অনিয়মের বিষয় জেনে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছি। নিচতলার কাজ শেষ হয়েছে। ওপরে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দোকান বুঝিয়ে দেব।’