Image description

Ali Ahmad Mabrur ( আলী আহমদ মাবরুর)

ফ্যাসিবাদী শাসনামলে আমাদের কত নেতাকর্মী যে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন সে খতিয়ান কি কারো কাছে আছে? এর চেয়েও অনেক বেশি সংখ্যক নেতাকর্মী ছিলেন যাদের প্যারোল আবেদনগুলো বিগত ফ্যাসিবাদী প্রশাসন খারিজ করে দিয়েছে। ফলে অসংখ্য মানুষ ছিলেন যারা মায়ের বা বাবার মুখটা শেষবারের জন্যেও দেখতে পারেননি। এখন তারা মুক্ত হয়েছেন ঠিকই; কিন্তু বাকি জীবন তাদেরকে এভাবেই; এই না পাওয়ার বেদনা নিয়েই কাটাতে হবে।
 
আমাদের বড়ো দুর্বলতা হলো, আমরা আমাদের দু:সময়ের গল্পগুলো তুলে আনতে পারছি না। সামনে কী পাবো আর কী হবো- এই তাড়না আমাদের অতীত ভুলিয়ে দিচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে আমরা ক্ষমার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করছি। এর ফলে দুটো ক্রাইসিস হচ্ছে। একদিকে যেমন অন্যায়কারীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে আর দ্বিতীয়ত আমাদের বুকের আগুনটা নিভে যাচ্ছে। এগুলো আমাদের সংকট।
 
আর দু:সময়ের গল্প তুলে না আনায় বড়ো পরিসরে যে সংকট তৈরি হচ্ছে তাহলো, মানুষের মধ্যে ফ্যাসিবাদী আমলের খয়ের খাঁ ও দোসরদের জন্য মায়া তৈরি হচ্ছে। অনেকে তাই ফ্যাসিবাদী আমলের মন্ত্রীর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার গল্প শুনে সহানুভূতি দেখাচ্ছে অনেকে আবার প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার দৃশ্য দেখে আবেগে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। অথচ এই প্রশ্ন তাদের মাথায় আসছে না যে, কেন একজন মানুষ মন্ত্রী থাকার পরও তাকে এভাবে পালাতে হলো? অথবা কী অন্যায় তারা করেছিলেন যে তার হাত দিয়ে পদায়ন পাওয়া ব্যক্তিরাই তার বিরুদ্ধে চলে গেল?
 
দু:সময়ের গল্পগুলো সামনে আনা দরকার। আমাদের দায়িত্বশীলরা যারা গত ১৫ বছর ভয়াবহ সব নির্যাতন সহ্য করেছেন, তাদের সবারই এরকম করুণ ইতিহাস আছে। আমার বাবা প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন তার ভাইয়ের জন্য, কামারুজ্জামান চাচাও পেয়েছিলেন, আল্লামা সাঈদী রহ. তার মা ও তার বড়ো ছেলের জন্য প্যারোলে এসেছিলেন, তার ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর পর তাকে প্যারোলে মুক্তি দেয়াই হয়নি, মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলামও তার স্ত্রীর মৃত্যুতে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন। আর জেলা, উপজেলা, তৃণমূল পর্যায়ে কত অসংখ্য মানুষ এভাবে মায়ের দেখা পেয়েছিলেন তার হিসেব নেই।
কাউকে শিকলে পরিয়ে জানাজা পড়তে দেয়া হয়েছে, কোনো কোনো বন্দী এমনও ছিলেন- যাকে তার আপনজনের মুখ শেষবারের মতো দেখানোর জন্য লাশকেই উল্টো জেলখানায় টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে- এই ধরনের ঘটনাগুলো আমরা ভুলে যাচ্ছি। আর তখন কোনো মিডিয়াকেও এরকম মানবিক স্টোরি করতে দেখিনি।
 
আমি নিজে যেহেতু আগে থেকেই অতীত চর্চা করার মানসিকতা লালন করি, তাই আমার কেন যেন এই বিষয়গুলোই বারবার মনে পড়ে। তবে ইতিহাসের শিক্ষা হলো- ন্যাচারাল রিভেঞ্জ খুব মারাত্মক একটি বিষয়। ভিকটিম যদি ছেড়েও দেয়, ন্যাচারাল রিভেঞ্জের হাত থেকে ছাড় পাওয়া খুব কঠিন।