Image description

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে সরকারি গাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার আসামি। তার নাম ডা. মীর হোসেন মিঠু। তিনি সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক। তার বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শোষণামলে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া ও আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তৃতা করাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা মেট্রো- ঘ ১৮-৬৩৫৯ নম্বরের ‘হার্ড জিপ’ ধরনের গাড়িটি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। এটি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন। কিন্তু সেটি এখন ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করছেন ডা. মিঠু।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈদুল আজহার আগের দিন বুড়িচংয়ের ষোলনল ইউনিয়নের ভরাসার বাজারে গিয়ে গাড়িটি ডা. মিঠুর হাতে তুলে দেন চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান । এর পর থেকে তিনি নিজেই সেটি ব্যবহার করছেন।

গাড়িটি লাইন ডিরেক্টর সিবিএইচসি, বি এম আরসি ভবন মহাখালীর নামে নিবন্ধন করা। এটি ‌স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছিল ২০২০ সালের দিকে ।

গাড়িটির রেজিস্ট্রেশনে সিবিএইচসি কর্মকর্তা ডা. রাজবংশীর মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছিল। তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, ২০২০ সালে কিছু গাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেওয়া হয়েছিল। এসব গাড়ি কেউ ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করতে পারবে না ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চান্দিনা উপজেলা কমপ্লেক্সের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি হাসপাতালের গাড়ি অন্য উপজেলায় নিয়ে কেউ ব্যবহার করবেÑ এটা চরম অনিয়ম । এ ধরনের অনিয়ম বর্তমান বাংলাদেশে মেনে নেওয়া যায় না । শুনেছি যিনি গাড়িটি ব্যবহার করছেন তিনি সরকারি কর্মকর্তা হয়েও গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের সমাবেশ-মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিয়ে ছিলেন । এমনকি নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করে নৌকায় ভোট চেয়েছিলেন । তার বিরুদ্ধে জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় মামলাও রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মিঠু বলেন, ‘ঈদের আগের দিন গাড়ির সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর। বলেছি, আমার কাছে দিয়ে যান । আমি মেরামত করব ।’

কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার ওসি মহিনুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় ডা. মীর হোসেন মিঠুর নামে মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আরিফুর আমার দেশকে বলেন, ‘ঈদের আগের দিন আমি ভরাসার বাজার গিয়েছিলাম । গাড়িটি ডা. মিঠুর কাছে দিয়ে এসেছি । গাড়িতে একটু সমস্যা ছিল । তিনি বলেছেন, মেরামত করে পাঠিয়ে দেবেন ।’

কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মো. বশির আহমেদ আমার দেশকে বলেন, ‘চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কাজটি ঠিক করেনি । আমি গাড়িটি ক্লোজড করে কুমিল্লায় সিভিল সার্জন অফিসে আনব ।’