Image description

জ্যোতির্বিদ্যায় নতুন যুগের সূচনা করলেন হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমির গবেষকেরা। তারা শনাক্ত করেছেন মহাবিশ্বে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী বিস্ফোরণগুলোর একটি, যা ‘এক্সট্রিম নিউক্লিয়ার ট্রানজিয়েন্টস (ENTs)’ নামে পরিচিত নতুন এক শ্রেণির মহাজাগতিক ঘটনা।

বিজ্ঞানীদের মতে, এই বিস্ফোরণগুলো বিগ ব্যাং-এর পর সবচেয়ে বেশি শক্তি বহনকারী ঘটনা, যা সুদূর ছায়াপথের কেন্দ্রে থাকা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল কোনো অতিভারী তারা (সূর্যের তুলনায় অন্তত তিনগুণ বেশি ভারী) গ্রাস করলে ঘটে।

এই ঘটনাগুলো এতটাই শক্তিশালী যে, একটি বিস্ফোরণে যত শক্তি নির্গত হয়, তা ১০০টি সূর্য তার সারাজীবনে যত শক্তি নির্গত করে, তার সমান। এই বিস্ফোরণগুলোর উজ্জ্বলতা এতটাই তীব্র যে তা মহাকাশের বিশাল দূরত্ব থেকেও শনাক্তযোগ্য।

 

গবেষণাটি আজ প্রকাশিত হয়েছে Science Advances জার্নালে।

 

গবেষণা দলের প্রধান ও হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক জেসন হিঙ্কল বলেন, ‘গত এক দশকে আমরা অনেক তারাকে ব্ল্যাক হোলের কারণে ছিন্নভিন্ন হতে দেখেছি, কিন্তু ENTs পুরোপুরি নতুন মাত্রা। এগুলোর উজ্জ্বলতা সাধারণ টিডাল ডিসরাপশন ইভেন্টের তুলনায় প্রায় দশগুণ বেশি, এবং এই উজ্জ্বলতা বছরের পর বছর স্থায়ী হতে পারে।’

তারা জানান, সবচেয়ে শক্তিশালী ENT, যেটিকে Gaia18cdj নাম দেওয়া হয়েছে, সেটি সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারনোভাগুলোর তুলনায় ২৫ গুণ বেশি শক্তি নির্গত করেছে। যেখানে একটি সাধারণ সুপারনোভা এক বছরে যত শক্তি দেয়, তা সূর্য তার পুরো ১০০ কোটির বছরের জীবনে দেয়, সেখানে ENTs এক বছরে ১০০ সূর্যের শক্তি ছড়ায়।

এই বিস্ময়কর ঘটনাগুলো প্রথম ধরা পড়ে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির গাইয়া মিশনের ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে। জেসন হিঙ্কল জানান, তিনি আকাশে সময়ের সঙ্গে উজ্জ্বলতা বাড়তে থাকা ফ্লেয়ারগুলোর সন্ধান করছিলেন এবং তখনই দুটি অস্বাভাবিক আলোর উৎস নজরে আসে, যা অনেক দীর্ঘ সময় ধরে উজ্জ্বল হয়ে ছিল এবং সাধারণ ট্রানজিয়েন্টদের বৈশিষ্ট্য মেলেনি।

তিনি বলেন, ‘গাইয়া শুধু জানায় যে কোনো কিছু উজ্জ্বল হয়েছে, কিন্তু কী কারণে তা জানায় না। কিন্তু যখন আমি এই মসৃণ, দীর্ঘস্থায়ী ফ্লেয়ারগুলো দেখলাম ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে আসছে, তখনই বুঝেছিলাম, আমরা কিছু অস্বাভাবিক দেখছি।’

এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে মহাবিশ্বে ব্ল্যাক হোল ও তারাদের পারস্পরিক সম্পর্ক, শক্তি বিনিময় এবং মহাজাগতিক বিবর্তন বোঝার জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দেবে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।

 

সূত্র: এনডিটিভি।