Image description
 

জাপানি বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের প্লাস্টিক তৈরি করেছেন, যা সাগরের পানিতে দ্রুত গলে যায় এবং কোনো ক্ষতিকর অবশিষ্টাংশ রেখে যায় না। এই অভিনব উদ্ভাবন সামুদ্রিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় ও রিকেন ইনস্টিটিউটের যুগ্ম গবেষণা

জাপানের রিকেন সেন্টার ফর এমার্জেন্ট ম্যাটার সায়েন্স এবং টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মিলে এই নতুন প্লাস্টিক আবিষ্কার করেছেন। এটি সাধারণ পেট্রোলিয়াম-ভিত্তিক প্লাস্টিকের মতোই দৃঢ় হলেও লবণযুক্ত পানিতে পড়লেই ভেঙে পড়ে নিজের মূল উপাদানে।

 

গবেষণা দলের প্রধান তাকুজো আইডা বলেন, ‘তিন দশকের বেশি সময় ধরে আমি সুপ্রামলিকিউলার পলিমার নিয়ে কাজ করেছি। এই নতুন প্লাস্টিক তারই একটি পরিণতি।’

 

তার ভাষ্য অনুযায়ী, দলটি এমন একটি যৌগ খুঁজছিল যা শক্তিশালী প্লাস্টিক তৈরি করতে পারে, আবার নির্দিষ্ট পরিবেশে দ্রুত ক্ষয়ের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উপাদানে পরিণত হয়।

খাদ্য ও কৃষিতে ব্যবহৃত উপাদান দিয়েই তৈরি নতুন প্লাস্টিক

গবেষকরা শেষ পর্যন্ত সোডিয়াম হেক্সামেটাফসফেট (একটি প্রচলিত খাদ্য উপাদান) এবং গ্যানিডিনিয়াম আয়ন-ভিত্তিক মনোমার (সার ও মাটির উন্নয়নে ব্যবহৃত উপাদান)-এর মিশ্রণ ব্যবহার করেন।

“মনে হচ্ছিল যেন খড়ের গাদায় সুচ খুঁজছি। কিন্তু আমরা একেবারে শুরুতেই উপযুক্ত সংমিশ্রণ পেয়ে যাই। তখনই ভাবি, ‘হয়তো এটা সত্যিই কাজ করবে’,” বলেন তাকুজো আইডা।

বিপজ্জনক নয়, বরং পুষ্টিকর হয়ে যায় ভাঙনের পর

এই প্লাস্টিক ভাঙার পর যেসব উপাদান অবশিষ্ট থাকে সেগুলো হল নাইট্রোজেন ও ফসফরাস। এগুলো মাইক্রোবায় কাজ করে এবং গাছও গ্রহণ করতে পারে। এটি মানুষের জন্য বিষাক্ত নয়, দাহ্য নয় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে না।

তবে আইডা সতর্ক করে বলেন, যতই পরিবেশবান্ধব হোক না কেন, এর ব্যবহারে সাবধানতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা আবশ্যক।

মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন বিশ্বজুড়ে মহাবিপদ

অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা—মাইক্রোপ্লাস্টিক—আজ মেরিয়ানার গভীর সমুদ্র থেকে এভারেস্টের চূড়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। এগুলো মানুষের মস্তিষ্ক, গর্ভনালির প্ল্যাসেন্টা, এমনকি গভীর সমুদ্রের মাছের পেটেও পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন বৈশ্বিক জরুরি পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এটি প্রাণীজগৎ এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য এক ভয়ংকর হুমকি।

জাপানি বিজ্ঞানীদের এই নতুন উদ্ভাবন হয়তো এমন এক বিকল্প হতে পারে, যা প্লাস্টিক দূষণ রোধে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

 

সূত্র: এনডিটিভি।