
ঈদুল আজহা ঘিরে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উৎসবের আমেজে মুখরিত হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস। মুসলিম শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মাঝেও ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে ব্যতিক্রমধর্মী নানা আয়োজন করেছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ কয়েকটি আবাসিক হলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য খাসি জবাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে তারাও ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারেন।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা জগন্নাথ হলে ঈদের দিন চারটি খাসি জবাইয়ের ব্যবস্থা করেছে। সংগঠনের মুখ্য সংগঠক হাসিব আল ইসলাম বলেন, “আমরা চাচ্ছি, ভিন্নধর্মাবলম্বী ভাইদের মাঝেও ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিতে। সে ভাবনা থেকেই এ আয়োজন।”
তবে এবার ঈদের দিন ‘নির্জলা একাদশী’ পড়ায় বাগছাস আয়োজনটি একদিন পিছিয়ে দিয়েছে। পরদিন দুপুরে শিক্ষার্থীদের জন্য খাওয়ার আয়োজন থাকবে। একই সঙ্গে একাদশী উপলক্ষে সেদিন সন্ধ্যায় উপাসনালয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য ফল-মূলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এছাড়াও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখা ঈদ উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সংগঠনটি ঈদের দিন দুপুর ১টা থেকে মুহসিন হল মাঠ ও কার্জন হল এলাকায় মেজবান আয়োজন করে। যারা গরুর মাংস খান না বা হিন্দু ধর্মাবলম্বী, তাদের জন্য ছিল আলাদা করে খাসির ব্যবস্থা। পাশাপাশি নারী ও পুরুষের জন্য ছিল পৃথক কর্নার।
সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত খেলাধুলা ও বিভিন্ন বিনোদনমূলক ইভেন্টও আয়োজন করে তারা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঈদ উপলক্ষে কোনো আলাদা আয়োজন না করলেও সংগঠনের শীর্ষ নেতারা ঢাবি ক্যাম্পাসেই ঈদ উদযাপন করেন। ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ নেতাকর্মীরা ঈদের দিন সকাল ১১টায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মোনাজাতে অংশ নেন বলে জানা গেছে।
ছাত্রসংগঠনগুলোর এই উদ্যোগে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য খোলা দাওয়াত রাখা হয়েছে। এতে ঈদুল আজহা পরিণত হয়েছে ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শনে।
ঈদের ছুটিতে ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি যাননি বেশ কয়েকশ শিক্ষার্থী। জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী সজল দেব বলেন, “চাকরির প্রস্তুতির কারণে এবার বাড়ি যাইনি। তবে এবারের ঈদে যে সম্প্রীতির দৃশ্য দেখছি, তা আগে কখনো দেখিনি। সবাই মিলে-মিশে একসাথে ঈদ উদযাপন—এটি হৃদয় ছুঁয়ে যায়। যারা এমন আয়োজন করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।”
ছাত্রসংগঠনগুলোর এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক দেবাশীষ পাল বলেন, “ছাত্রসংগঠনগুলোর সৌহার্দ্যপূর্ণ এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ফুলের সুগন্ধির মতো ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক, এটাই আমাদের কাম্য।”