
করোনাকালে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ডিজিটাল কোরবানির হাটে একসময় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলেও এবার তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে বেশ কিছু অনলাইন হাট সক্রিয় আছে। এসব অনলাইন হাটেই ব্যক্তি উদ্যোগে চলছে পশু কেনাবেচা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে ২০২০ সালে ডিজিটাল হাট চালু করে। এর পরের দুই বছর প্রচার ও উদ্যোগের কারণে ডিজিটাল হাট জমজমাট ছিল। কিন্তু গত বছর সরকারিভাবে আর সেই প্রচারণা ছিল না।
সরকারি উদ্যোগের এই প্ল্যাটফর্মে ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ৮৭ হাজার পশু বিক্রি হয়। এর পরের বছর তা কমে ৭০ হাজার ৫৭০টি পশু বিক্রি হয়। আর ২০২৩ সালে ডিজিটাল হাট প্ল্যাটফর্মে ৫৬ হাজার ৮২১টি পশু বিক্রি হয়।
আর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে সারা দেশের বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে ৫ লাখ ৫ হাজার ৪৯৪টি পশু বিক্রি হয়েছে।
সরকারি উদ্যোগের ডিজিটাল হাট আইসিটি বিভাগের প্রকল্প এটুআইয়ের উদ্যোগ একশপ থেকে পরিচালিত হতো। এটুআই সূত্রে জানা গেছে, এটুআই এই একশপ উদ্যোগ বাতিল করেছে। এ কারণে ডিজিটাল হাটও বন্ধ হয়ে গেছে। ডিএনসিসিরও ডিজিটাল হাট বা অনলাইন হাট নিয়ে এবার কোনো উদ্যোগ নেই।
অনলাইনে কেনাকাটায় মানুষ এখন অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তাই কোরবানির পশুও এখন অনেকে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে কেনার ফরমাশ দিচ্ছেন। খামারিদের পোস্ট করা পশুর ছবি ও ভিডিও দেখে অনেক গ্রাহক আগ্রহী হয়ে যোগাযোগ করছেন। সরকারিভাবে অনলাইন হাট না থাকলেও অনেক খামারিই এখন অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশের গ্রাহক ধরতে নিজেদের মতো করে প্রচার চালাচ্ছেন।
পারভেজ আহমেদ চার বছর ধরে অনলাইনে কোরবানির পশু কিনছেন। এবারও তিনি পরিচিত খামারগুলোর পেজে ঢুঁ দিচ্ছেন। পাশাপাশি গতবার যাঁদের থেকে কিনেছেন, তাঁরাও কেউ কেউ যোগাযোগ করছেন। হাটে গিয়ে পশু কেনার মধ্যে আনন্দ থাকলেও ঝামেলাও অনেক। তিনি কোনো ঝামেলায় যেতে চান না। তাই অনলাইনেই কোরবানির গরু বুকিং দেবেন। প্রয়োজনে খামার ঘুরে আসবেন।
প্রায় এক দশক আগে প্রতিষ্ঠা হয় নারায়ণগঞ্জভিত্তিক আর কে অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড নামের খামারটি। চার বছর ধরে, অর্থাৎ করোনার সময় থেকে অনলাইনে পশু বিক্রি শুরু করে খামারটি। এই খামারের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় বাইরে চলাচল নিয়ে মানুষের মধ্যে ভয় ছিল। সে সময় ছবি, ভিডিও বা সরাসরি ভিডিও কলে পশু দেখেই বুকিং হতো। গ্রাহক যেদিন পশু পাঠাতে বলতেন, সেদিন পাঠিয়ে দেওয়া হতো।
করোনার পর অনলাইনে পশু কেনার প্রবণতায় একটু ভিন্নতা এসেছে মন্তব্য করে আবদুস সামাদ বলেন, এখন অনলাইনে ছবি দেখে ক্রেতা যোগাযোগ করেন। পরে খামারে এসে তা সরাসরি দেখে বুকিং দেন। এখন পশু নিজ চোখে দেখে কেনার আগ্রহই ক্রেতাদের বেশি।
অনলাইন প্রচারে খামারিরা পশুর ছবির সঙ্গে ওজন, বয়স, খাদ্যতালিকা, গায়ের রংসহ বিস্তারিত তথ্য জুড়ে দেন।
নওগাঁভিত্তিক ফ্রেশি ফার্ম গত বছর থেকে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু করেছে। ভালো সাড়া পাওয়ার কথা জানিয়ে এই খামারের গ্রাহক সেবাদাতা (কাস্টমার সাপোর্ট) নাবিল ওয়ালিদ প্রথম আলোকে বলেন, নওগাঁ ছাড়াও ঢাকায় তাঁদের একটি ছোট খামার আছে। মূলত অনলাইনে ছবি ও ভিডিও দেখে যাঁরা বুকিং দেন, তাঁদের পশু ঢাকার খামারে এনে রাখা হয়। ঈদের দু-এক দিন আগে তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
নাবিল ওয়ালিদ জানান, এবার ২০০ থেকে ৩০০ কেজির লাইভ ওজনের (সামগ্রিক ওজন) গরুর চাহিদা বেশি, যার দাম সাধারণ এক থেকে দুই লাখ টাকা পড়ছে।
খামারিদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মেও কোরবানির পশু বিক্রির প্রচারণা চলছে। আবার অনলাইনে অনেকে পশু কেনা ছাড়াও পুরো কোরবানি সম্পন্ন করে নিজের ভাগটুকুও অনলাইনের মাধ্যমে ডেলিভারি নিচ্ছেন।
অনেক খামার পশু কোরবানির পুরো প্রক্রিয়াটাই সম্পন্ন করে দেয়। অনলাইনের মাধ্যমে যাঁরা গরুর ভাগ নিতে চান, তাঁরা এসব খামারে বুকিং করেন। ঈদের দিন কোরবানির পর এসব ভাগা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। মানুষ এখন আগের চেয়ে অনলাইননির্ভর হওয়ায় অনলাইনের মাধ্যমে পশু কেনা ও মাংস নেওয়ার আগ্রহ বাড়ছে।