
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। ঈদের বাকি কয়েকদিন। অন্যান্য বছর কোরবানির ঈদকে ঘিরে বেড়ে যায় সব ধরনের মসলার দাম। তবে এবার দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। রাজধানীর বাজারগুলোতে মসলার দাম কিছুটা কম অন্য সময়ের তুলনায়। কিছুটা দাম বেড়েছে এলাচ ও দারুচিনির দাম। অন্যসব মসলার দাম কিছুটা কমেছে কিছুটা অপরিবর্তিত রয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, এবার কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে মসলার বাজার সিন্ডিকেট সক্রিয় না থাকায় দাম অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কম। বিগত ৬ মাসেও মসলার দামের এতো পরিবর্তন দেখা যায়নি। ক্রেতারা বলছেন, প্রত্যেক বছর কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে মসলার দাম বেড়ে যায়। মসলা কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় মানুষকে। এবারো খুব বেশি কম দেখা যাচ্ছে না। তবে কিছু কিছু মসলার দাম কমেছে। মসলার বাজার ভালো আছে, স্বস্তি নিয়ে মসলা কিনতে পারা যাচ্ছে। অন্যান্য বছর সরকারের সুবিধাভোগী লোকজন সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। সেখানে এবার তো আর সেই সরকার সেই। তাই সাধারণ মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আরেকটু আশা করে বাজারের বিষয়ে। গতকাল সরজমিন কাওরান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
বাজার ঘুরে দেখা যায়- এলাচ, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচের মতো প্রয়োজনীয় মসলার দাম ঈদকে সামনে রেখে বেচাবিক্রি বেড়েছে। তবে দাম তুলনামূলক কম রয়েছে। কাওরান বাজারে দেখা যায়, মান ও সাইজভেদে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায়, যা ঈদের আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কম। জিরার কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, দারুচিনি ৫৫০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৬৫০ টাকা, জয়ফল ১ হাজার ২৮০ টাকা ও কালো এলাচ ৪ হাজার টাকা, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৪৫০ টাকা ও কালো গোলমরিচ ১ হাজার ১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারে মসলা ব্যবসায়ী মো. জসিম বলেন, ঈদের সময় আসলে মসলার দাম বেড়ে যায়। তবে এবার মসলার দাম তুলনামূলক অনেক কম। বিগত ৬ মাসেও মসলার দাম এত কম আমি দেখিনি। সিন্ডিকেট সক্রিয় না থাকায় এবার হয়তো মসলার দাম বাড়েনি। আমরাও কমদামেই বিক্রি করছি।
একই বাজারের সোনারগাঁও স্টোরের বিক্রেতা বলেন, মসলার দাম কোথাও খুব একটা বাড়েনি এবার। চট্টগ্রামসহ সব জায়গায় মসলার দাম কমই রয়েছে বলা যায়। ক্রেতারাও এখন স্বাচ্ছন্দ্যে কিনছেন। তবে মসলার বাজার রাজধানীতে এখনো জমে উঠেনি তেমন। দু-একদিনের মধ্যে আরও বিক্রি বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কাওরান বাজারে মসলা কিনতে আসা আব্দুল জলিল বলেন, প্রত্যেকবার তো মসলার দাম কোরবানিকে কেন্দ্র করে বেড়ে যায়। তবে এবার তেমন দেখছি না। দু-একটি মসলার দাম একটু বেশি তবে বাকিসব তুলনামূলক অন্যান্য সময়ের চেয়ে কমই রয়েছে। দাম একটু বেশি দেখছি দারুচিনি ও এলাচে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা রহিমা খাতুন বলেন, বাজার তো বাজারই। প্রত্যেকবার তো দেখি মসলার দামের কারণে হাত দেয়াই দায় হয়ে পড়ে। আমাদের মতো মধ্যবিত্তরা প্রতিনিয়ত হিমশিম খাই মসলা কিনতে এসে। এবার কমই মনে হচ্ছে। তবে এই দাম অপরিবর্তিত থাকবে কতোদিন সেটাই প্রশ্ন আমার।
এ ছাড়াও বেশির ভাগ ক্রেতারা বলছেন, সরকার যদি ঈদের সময়টাতে বাজারে তদারকি অব্যাহত রাখতে পারেন। তাহলে দাম স্থিতিশীল থাকবে। কোনো সিন্ডিকেট তৈরি হবে না। নজরদারি না থাকায় প্রত্যেকবার সিন্ডিকেট তৈরি হয়। তারা মানুষকে জিম্মি করে ফেলে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলিম আখতার খান মানবজমিনকে বলেন, বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। শক্তভাবে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য স্থানীয় প্রশাসনেরও সাহায্যের দরকার রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সবকিছু মাঠ পর্যায়ে দেখে থাকেন। তবে বাজার তদারকির কোনো কমতি রাখা হচ্ছে না। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।