
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নারীঘটিত অনেক অভিযোগ অতীতেও ছিল এবং এখনো আছে। তবে বর্তমান জনপ্রশাসন সচিব পদে যিনি আছেন, ড. মো. মোখলেস উর রহমানের নারী কেলেঙ্কারির ইতিহাস একেবারেই আলাদা। নারীঘটিত নানা ঘটনায় তিনি ইতিপূর্বে হাতেনাতে ধরা পড়ে নাজেহালও হয়েছেন। কিন্তু তারপরও মোটেই থামেননি তিনি। একেবারে চাকরিজীবনের প্রথমদিকে শুরু করা এ ধরনের অপকর্মের ধারাবাহিকতা এখন এই বুড়ো বয়সেও তিনি অব্যাহত রেখেছেন। সংশ্লিষ্টদের মতে, একমাত্র নারী লিপ্সার কারণেই মোখলেস উর রহমানকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ সহজে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়।
মোখলেস উর রহমানের নারীঘটিত কেলেঙ্কারীর অন্ত নাই। মৌলভীবাজার, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার প্রায় প্রতিটি কর্মস্থলেই তিনি অঘটন ঘটিয়েছেন। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশী হস্তক্ষেপের ঘটনার পরে তাকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করতেও বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এখনও সুন্দরী তরুণীরা তার কাছে এলে গ্লামার, নানা কলাকৌশল অথবা চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে উত্তক্ত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এজন্য কেউ কেউ তাকে ‘ইভটিজার সচিব’ বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মোখলেস উর রহমান মৌলভীবাজারের ডিসি থাকাকালে নারী কেলেঙ্কারীতে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েন, বিশেষ করে জুনিয়র নারী কর্মকর্তারা তার জন্য কাজই করতে পারতেন না। রাতের বেলায় ফোন করে তাদের সাথে প্রেমালাপ শুরু করতেন, ফিসফিস কথাবার্তায় উত্যক্ত করতেন। মৌলভীবাজারে জুনিয়র অফিসার এক এডিসির স্ত্রীর সাথেও অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে কেলেঙ্কারী ঘটান তিনি।
২০০২ সালের ঘটনা। মৌলভীবাজারের বিটিআরআই-র রেস্ট হাউজে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নিয়ে একান্ত সময় কাটাতে যান মৌলভীবাজার জেলার ডিসি মোখলেস উর রহমান। শ্রীমঙ্গলের তখনকার ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন (প্রশাসন ক্যাডারের ৮ম বিসিএস) এই ঘটনা হাতেনাতে ধরে ফেলেন। একে একে আরও অফিসাররা উপস্থিত হন। ডিসি হিসাবে বড় ডায়লগ দিতে চাইলে সেখানেই মোকলেসের কলার চেপে ধরে মারধর শুরু করেন ইউএনও মামুন এবং উপস্থিত লোকজন।
২০০৬ সালের শেষ দিকে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার পদে থাকাকালে সেখানেও নবীন নারী কর্মকর্তারা তার ল্যাম্পট্যের শিকার হন। এরূপ একজন কর্মকর্তা ছিলেন প্রশাসনের ২৫ বিসিএসে যোগদান করা এক নারী কর্মকর্তা (বর্তমানে একটি জেলার জেলাপ্রশাসক)। তার স্বামী ছিল সরকারী কলেজের শিক্ষক। কমিশনার মোখলেসের উৎপাতে এই নারী কর্মকর্তাকে নিয়ে মহা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। যখন তখন ফোন করে বিরক্ত করা, মেসেজ দেয়া, নিঝুম দ্বীপে নিয়ে অশালীন কান্ড করা সহ নানান অঘটন ঘটায়। এক পর্যায়ে কক্সবাজার সার্কিট হাউজে তাকে নিয়ে ধরা পড়েন মোখলেস। এ নিয়ে পুলিশী মামলা হলে তাকে বিভাগীয় কমিশনার পদ থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় সরকার।
জনপ্রশাসন সচিব হয়েই মোকলেস উর রহমান তার পুরোনা কু-অভ্যাস- নারীঘটিত ঘটনায় ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জনপ্রশাসন সচিব হওয়ার সুবাদে তার হাতে এখন ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ ধরনের অপকর্ম করার সুযোগও বেশি। সেটিই তিনি কাজে লাগাচ্ছেন দেদারছে। ২০২৫ সালের শুরুতে পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারের ১৮ ব্যাচের ২ নারী অফিসার ৩য় গ্রেডে পদোন্নতির ক্লিয়ারেন্স আনতে যায় জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমানের অফিসে। এদের একজন ৫৫ বছর বয়সী, তবে সুন্দরী। তার মোবাইল ফোন নম্বর রেখে দেন সচিব মোখলেস। পরে তার সাথে চ্যাট করতে করতে অশালীন মেসেজ বিনিময় করেন। এমনকি সেই সুযোগে কথা বের করেন, কখন মহিলার স্বামী বাসায় থাকে না। চ্যাটিং শেষে মোখলেসের মন্তব্য ছিল, ”আজ বড় মজা পাইলাম”! এই ইভ-টিজিংয়ের ঘটনা মহিলা অফিসারটি তার গ্রুপের মধ্যে শেয়ারও করেন।
ঢাকা এবং বাইরের বিভিন্ন অফিসে মোখলেস উর রহমানের খাতিরের বহু মেয়ে অফিসার/কর্মচারি আছেন। তাদের বিভিন্ন রকম সুবিধা দিতে তিনি হরহামেশাই অফিসপ্রধানদের চাপ প্রয়োগ করেন। অনেক সময় সকালে তিনি অফিসে অগোছালোভাবে আসেন। অফিসে এসে গোসল-শেভ সারতেও দেখো গেছে তাকে। রাজধানী এবং আশপাশের জেলাগুলোর রিসোর্টে, রেস্ট হাউজে মোখলেস উর রহমানের রাত কাটানোরও অভিযোগ পাওয়া যায়। যেকোনো সময় ধরা পড়ে সরকারের জন্য বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারেন তিনি, এমনও আশংকা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এত অঘটনের পরে স্বাভাবিকভাবেই কোন কর্মকর্তার চুক্তির চাকরি হওয়ার কথা নয়, টিকে থাকারও কথা নয়। কিন্তু মোখলেসকে সর্বদা সেভ করে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সেট করিয়ে তাকে দিয়ে দেশ বিরোধী কাজ করিয়ে আসছে প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। র-এর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মোখলেস দক্ষ কারিগর হলেও এই কাজে আরো অনেক সরকারি কর্মকর্তা জড়িয়ে গেছে বিভিন্ন সময়ে। এহেন পরিস্থিতিতে মোখলেস উর রহমানের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া না হলে সে যেকোনো সময় সরকারের চরম ক্ষতি করে তিনি পর্তুগালে পালিয়ে যেতে পারেন, যেখানে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা জমা করেছেন। ইতিপূর্বে তিনি দুদকের সচিব পদে থাকাকালে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তৈরি করে দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ যে অন্যায়, অবিচার, জেল-জুলুম, হয়রানি করেছেন এরজন্য যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করা উচিত। সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকেও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলাসহ সরকার পতনের নানা ষড়যন্ত্রে তিনি র-এর সঙ্গে একত্ম হয়ে কাজ করছেন।
শীর্ষনিউজ