মৃগী রোগী ও প্রতিবন্ধী যুবক জয়নাল আবেদিন ভ্যান থেকে ভরা নদীতে পড়ে স্রোতের তোড়ে প্রায় ১৩ কিলোমিটার ভেসে গিয়েও বেঁচে ফিরে অবাক করে দিয়েছেন।
তিনি ক্ষেতলাল পৌর এলাকার ভাসিলা ফকিরপাড়া গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে।
সোমবার সকাল ৮টায় জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার তুলশীগঙ্গা নদীর বিলের ঘাট ব্রিজের উপর থেকে নদীতে পড়ে নিখোঁজের পর ১৩ কিলোমিটার ভেসে গিয়ে সাত ঘণ্টা পর আক্কেলপুর উপজেলায় গিয়ে জীবিত উদ্ধারের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, বাবার মৃত্যুর পর বড় ভাইয়ের বাড়িতে থাকতেন জয়নাল। গত তিন বছর আগে গাছে উঠতে গিয়ে পড়ে গিয়ে কোমরের মেরুদণ্ড ভেঙে যায় তার। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা নিতে না পারায় কোমরের নিচ থেকে অবশ হয়ে পুঙ্গত্ববরণ করেন তিনি। উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় বিদ্যুৎচালিত অটোভ্যানই তার চলাচলের একমাত্র বাহন।
মৃগী রোগে আক্রান্ত জয়নাল ওই বাহনে শোয়া অবস্থায় চালিয়ে বিভিন্ন হাটে বাজারে ভিক্ষাবৃত্তি করে বৃদ্ধ মা ও তার জীবিকা নির্বাহ করত। শোবার নিজস্ব কোনো ঘরও ছিল না জয়নাল ও তার মায়ের। সোমবার সকাল ৮টায় ভ্যান নিয়ে ভিক্ষা করার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন তিনি।
উপজেলার তুলশীগঙ্গা নদীর বিলের ঘাট ব্রিজের উপর পৌঁছলে হঠাৎ মৃগী রোগের উপসর্গ শুরু হয় এবং অসুস্থ অবস্থায় ব্রিজ থেকে নদীতে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হয় জয়নাল।
এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে জয়নাল নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ওই দিন দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে পার্শ্ববর্তী আক্কেলপুর উপজেলার নবাবগঞ্জ ঘাট এলাকা থেকে তাকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেন স্থানীয়রা।
খবর পেয়ে ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আল জিনাত ও ক্ষেতলাল থানার ওসিসহ ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আক্কেলপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সেখানে পৌঁছে জানতে পারে নিখোঁজ জয়নালকে নদী থেকে জীবিত উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন স্থানীয়রা। সেখান থেকে ওই টিম সন্ধ্যা ৬টায় জয়নালের ভাইয়ের বাড়ি ভাসিলা গ্রামে গিয়ে নগদ অর্থ সহায়তা ও সরকারি বাড়ি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়।
জয়নাল আবেদিন যুগান্তরকে জানান, সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিলের ঘাট ব্রিজে উঠলে আমার মৃগী রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। তারপর কী হয়েছে আমি জানি না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আল জিনাত, ওসি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ওবায়দুল হকসহ ক্ষেতলাল উপজেলা ফায়ার সার্ভিস টিম।
