হরেক রকম শীতকালীন সবজিতে ভরপুর রাজধানীর বাজারগুলো। তবে পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে পণ্য আসতে দফায় দফায় হাতবদলে দাম বেড়ে যায় কয়েক গুণ। খুচরা বাজারে বেশি দামে সবজি বিক্রি হলেও দাম পাচ্ছেন না কৃষক। লাভের টাকা ঢুকছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। বগুড়ায় ২ টাকায় যে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে সেই ফুলকপি রাজধানীর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। গতকাল রাজধানীর দুটি পাইকারি ও দুটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, কয়েক দফা হাতবদলে পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কেজিতে সর্বনিম্ন ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। পুরো টাকাটাই ঢুকছে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পকেটে।বিশ্লেষকরা বলছেন, ঠিকমতো বাজার তদারকি না করার সুযোগ নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজার মনিটরিং করছে না। ফলে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন হয়ে পড়ছে। এরই সুযোগ নিয়ে পকেট ভরছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এর একটু সামনে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। খিলক্ষেত বাজারে একই কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। আর যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে তা বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজারে যে শিম ১৮ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে তা কারওয়ান বাজারে বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। একই শিম খিলক্ষেত বাজারে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৭০ টাকায়। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, চার দফা হাতবদলে দু-তিনজন মধ্যস্বত্বভোগী যুক্ত হন। প্রতি ধাপে ২ থেকে ৮ টাকা বা তার বেশিও দাম বাড়ে। যেমন গতকাল কারওয়ান বাজারের একটি আড়তে প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়। অথচ কিছুদূর সামনে সেই একই মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেট ভরলেও কষ্টে আছেন কৃষকরা। সবজি বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। নরসিংদীর কৃষক রমিজ উদ্দিন খান বলেন, এ বছর শীতের সবজির ফলন ভালো। বাজারে সরবরাহ বাড়ায় ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে একটি মাজারি থেকে বড় সাইজের ফুলকফি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকায়। অথচ সেই কপির চারার দামই ছিল ২ টাকা। সার-কীটনাশকসহ শ্রমিক খরচ মিলিয়ে এবার ফুলকফিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের।কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, শীতের সময় সবজির দাম কমলেও সাধারণ ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এখনো আসেনি। ঠিকমতো বাজার মনিটরিং না করার সুযোগ নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। খুচরা বাজারে এখনো বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। একটি ফুলকপিতে তারা ৮-১০ টাকা লাভ করছে। যাদের বাজার তদারকি করার কথা তারা ঠিকমতো বাজার তদারকি করছে না। এই সুযোগে নিজেদের পকেট ভারী করছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, অতি মুনাফালোভীদের কারণে খুচরা বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে। এ ছাড়া পণ্য বাজারে ঢুকতে এবং বাজার থেকে বের হতে চাঁদাবাজি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু বাজার তদারকি করলেই এই সমস্যার সমাধান আসবে না। প্রতিটি পর্যায়কে তদারকির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।