
দেশের ৫৪তম বাজেট উত্থাপন হতে যাচ্ছে আজ সোমবার। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জাতির উদ্দেশে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট তুলে ধরবেন। এটি হবে তার প্রথম বাজেট ঘোষণা। আজ বিকাল ৩টায় ধারণকৃত বাজেট বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে ‘ফিড’ নিয়ে অন্য সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও বেতারে একই সময়ে জাতীয় বাজেট বক্তব্য সম্প্রচারের অনুরোধ করা হয়েছে এক তথ্য বিবরণীতে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে। যদিও নানা প্রচেষ্টার পরও এখনো মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপর রয়েছে। তা ছাড়া এবারের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে রয়েছে।
নতুন অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেটে ব্যাংক খাতে দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হতো। তবে এবার বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংককে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়ার উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এ জন্য গত ৯ মে ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এছাড়া ক্ষুদ্র ও মধ্যম আয়ের ব্যাংক আমানতকারীদের জন্য ব্যাংক জমায় আবগারি শুল্কমুক্ত সীমা ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হবে।
নতুন কাঠামো অনুযায়ী, ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত আবগারি শুল্কমুক্ত থাকবে। ৩ লাখ টাকার বেশি থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতের জন্য শুল্ক হবে ১৫০ টাকা। ৫ লাখ টাকার বেশি থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে ৫০০ টাকা। ১০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতের জন্য ৩ হাজার টাকা এবং ৫০ লাখ টাকার বেশি থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ৫ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে। ১ কোটি টাকার বেশি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতের জন্য ১০ হাজার টাকা এবং ২ কোটি টাকার বেশি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতের জন্য ২০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে।
এর আগে সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল ১/১১-পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। সেদিনও ছিল সোমবার। বেলা ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়েছিল মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের বাজেট বক্তব্য।
তারপর আওয়ামী লীগের চার মেয়াদে সাড়ে ১৫ বছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা ১০ বার, আ হ ম মুস্তফা কামাল পাঁচবার এবং আবুল হাসান মাহমুদ আলী একবার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন। নির্বাচিত সরকারের আমলের এসব বাজেট জাতীয় সংসদেই উপস্থাপন করা হয়। পরে মাসজুড়ে সেই প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা হতো সংসদে। জুন মাসের শেষ দিকে সংসদে পাস হতো নতুন অর্থবছরের বাজেট।
এবার সংসদ না থাকায় সংসদের আলোচনা বা বিতর্কের কোনো সুযোগ থাকছে না। তবে বাজেট ঘোষণার পর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর নাগরিকদের কাছে মতামত চাইবে অর্থ মন্ত্রণালয়। মতামতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর আগামী ২৩ জুনের পর যে কোনো একদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন নিয়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে তা আগামী এক জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।
সর্বশেষ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। জুলাইয়ে নতুন অর্থবছর শুরুর পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এবার বাজেটের আকার সামান্য ছোট হয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় কমছে।