Image description
বাজারে দেশীয় পশু

আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে শুরু হয়েছে পশু বেচাকেনা। ভারত থেকে গরু আমদানি না হওয়ায় এবার দেশীয় গরুতেই কোরবানির পুরো চাহিদা মিটবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে কোরবানির প্রয়োজন অনুযায়ী পশু দেশেই রয়েছে। হিসাব অনুযায়ী পশু উদ্বৃত্ত থাকার কথা। এই অবস্থায় পশুর দাম নিয়ে শঙ্কা রয়েছে খামারি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। বর্তমানে বাজারে গরুর দাম নিয়ে হতাশ বিক্রেতারা। তাদের কথা- দাম পড়তির দিকে। এমন হলে আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

গতকাল রাজধানীর কয়েকটি পশুর খামারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খামারগুলোতে অনেক আগে থেকেই পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। এখন বিক্রি প্রায় শেষ পর্যায়ে। মূল্যের দিক থেকেও রয়েছে সহনীয়। বাংলামোটরে গরুর খামারি আমিনুল ইসলাম বলেন, খামারে ১৫০টি দেশি জাতের গরু আছে। আজ ধোলাইখালের গরুর হাটে তুলবো গরুগুলো। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার জন্য খামার থেকে বের করতে শঙ্কায় রয়েছি। তিনি বলেন, এ বছর ভারতীয় গরু না আসলেও আমি মনে করি দেশীয় গরু অনেক আছে দেশের আনাচে-কানাচে। এসব গরু যদি ঠিকঠাক মতো দেশের গরুর হাটগুলোতে পৌঁছাতে পারে তাহলে দেশে গরুর সংকট হবে না। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া বা অন্যান্য পরিস্থিতির কবলে পড়ে যদি গরুগুলো ঠিকঠাক মতো হাটে না আসতে পারে তাহলে গরুর দাম স্বাভাবিক নাও থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত গরুর দাম নিয়ন্ত্রণে আছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি যদি এভাবেই থাকে তাহলে  কোরবানির পশু সংকটে পড়ারও একটা শঙ্কা আছে। ওদিকে রাজধানীর হাটে আসা পশু খুব একটা বিক্রি না হলেও ব্যবসায়ীদের ধারণা এবার দাম খুব একটা বেশি হবে না। কারণ চাহিদার চেয়ে বেশি পশু রয়েছে। 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর কোরবানিযোগ্য সর্বমোট ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি গবাদিপশুর প্রাপ্যতা আশা করা যাচ্ছে। এবার  কোরবানির জন্য প্রস্তুত গবাদি পশুর মধ্যে ৫৬ লাখ দুই হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য প্রজাতি রয়েছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবছরও প্রায় ২০ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৫টি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়। গত বছর দেশে কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ; এর মধ্যে কোরবানি হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ। ২০২৪ সালে শুধু কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় উপলক্ষে লেনদেন হয় ৬৯ হাজার ১শ’ ৪১ কোটি ১২ লাখ টাকা। যার সিংহভাগই যুক্ত হয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। এ ছাড়া গত বছর অনলাইন প্ল্যাটফরমে ৪ হাজার ৭ শ’ ৪০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা মূল্যের ৫.০৫ লাখ গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে।  

এদিকে এ বছর সীমান্ত পথে বন্ধ আছে গরু আনা-নেয়া। আগে  কোরবানির পশুর একটি বড় অংশ আসতো ভারত থেকে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের কড়াকড়ির কারণে এখন সীমান্ত দিয়ে গরু আসা বন্ধ রয়েছে। সীমান্ত নিয়ে গরু না আসায় দেশীয় পশুর উপরই নির্ভর করে কোরবানি হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। এতে দেশের খামারিরা লাভবান হচ্ছেন। অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। 

রামপুরার সামারাই ক্যাটেল ফার্মের মো. মাহিন বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঈদুল ফিতরের পর থেকে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। অধিকাংশ গরু বিক্রি হয়ে গেছে এখন আমাদের ফার্মে ৮-৯টি গরু আছে। এবার প্রায় সাড়ে তিনশ’র মতো গরু ছিল। আমাদের যে ক্রেতা আসে তাদের চাহিদা থাকে দেশি গরুতে। ভারতীয় গরু আমাদের ফার্মে বিক্রি করি না। 

তিনি বলেন, প্রতিবছরই ঈদুল ফিতরের পর থেকে বেচাকেনা শুরু হয়। এবারও সেটি হয়েছে। আমাদের ফার্মে যে গরু বিক্রি হয়েছে সেটির মূল্য ৭০ হাজার থেকে শুরু করে প্রায় ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। 

বসিলার সাত্তার এগ্রোর সাত্তার বলেন, আমাদের ফার্মে দেশি গরু রয়েছে। দুই একটা পাকিস্তানের গরু ছিল। ঈদ উপলক্ষে খামারে ২৫টি গরু ছিল-এর মধ্যে অর্ধেক বিক্রি হয়ে গেছে। বাকিগুলো ঈদের আগে বিক্রি হয়ে যাবে। গরুর দামও খুব একটা বেশি না।

মোহাম্মদপুর রাহমা ক্যাটেল ফার্মের সাকিব বলেন, আমাদের খামারে দেড়শ’টির মতো গরু ছিল। অনেক গরু বিক্রি হয়ে গেছে। সবগুলোই দেশি গরু। ক্রেতাদেরও দেশি গরুর প্রতি অনেক চাহিদা। এবার মনে হচ্ছে চাহিদার চেয়ে প্রচুর গরু থেকে যাবে। আমার ফার্মে ৭৫ হাজার থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে।

সম্প্রতি এক সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, বাংলাদেশ সরকার আমদানির পক্ষে নয়। বরং দেশের কৃষক ও উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।  যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা মাংস রপ্তানি করতে চায়। তারা নাকি কমদামে মাংস দেবে। তাহলে আমাদের যে লক্ষ লক্ষ খামারি আছেন, যারা গরু পালছেন, ছাগল পালছেন- তাদের কী হবে। আমাদের ১ কোটি ২৪ লাখেরও বেশি গরু-ছাগল প্রস্তুত আছে। আমাদের প্রায় ২২ লাখের মতো উদ্বৃত্ত আছে। তাই, কোনোভাবেই আমরা আমদানির পক্ষে না। আমি মনে করি, এটার জন্য চাপ সৃষ্টি হয়। 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ড. হোসেন মো. সেলিম মানবজমিনকে বলেন, দেশে প্রায় ২০ লাখ গরু, আমাদের চাহিদার তুলনায় বেশি আছে। আমরা মনে করি যে পরিমাণ গরু আছে তাতে সংকট হবে না বরং বেশি থাকবে। ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ার পর থেকে কিন্তু আমাদের দেশে ইন্ডাস্ট্রি আরও গ্রো করেছে। আমাদের খামারিরা কিন্তু নিজস্ব গরু প্রচুর উৎপাদন করেছেন কোরবানি উপলক্ষে। আমরা মনে করি, আমাদের মাঠ পর্যায়ের তথ্যানুসারে আমাদের গরু পর্যাপ্ত আছে, কোনো কোরবানির পশু সংকটে পড়বে না আরও বেশি থাকবে। এদিকে পশুর মূল্য সম্পর্কে যদি বলি সেটি পশুখাদ্যের দাম বাড়তি। সেই হিসেবে পশুর বাজার মূল্য যেমন রয়েছে সেটি খুব বেশি না সহনীয় রয়েছে।