
প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নেবার পর প্রফেসর ইউনুস এই প্রথমবারের মত এসেছিলেন জাপানে। ৩ দিনের সফরে।
দেশ কি পেল?
(১) জাপানে এসেছিলেন নিক্কেই গ্রুপের আমন্ত্রণে। ব্যবহার করেছেন কমার্শিয়াল বিমান। দেশের একটি টাকাও খরচ করেন নি। ওনার যাতায়াত, থাকা খাওয়া -সমস্ত খরচ বহন করেছেন নিক্কেই। সফর সঙ্গীদের খরচ ছাড়া।
(২) দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হলো। প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সাথে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা, অবকাঠামো উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে। সিদ্ধান্ত গুলো হলো -
আর্থিক সহায়তা দিবে মোট $১.০৬৩ বিলিয়ন। তাঁর মধ্যে $৪১৮ মিলিয়ন অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু সহনশীলতা উন্নয়নে; $৬৪১ মিলিয়ন জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথ উন্নয়নে আর $৪.২ মিলিয়ন শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ সহায়তা। আশা করি আমরা নিয়মিত আপডেট পাবো।
আর ছিল ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (EPA)। এটা একটা গুরুত্বপূর্ন এগ্রিমেন্ট। ২০২৬ সালের নভেম্বর মাস থেকে বাংলাদেশ আর LDC-র কোটার বানিজ্যিক সুবিধা, অল্প সুদে লম্বা সময়ের সফট লোন পাচ্ছিনা। কিন্তু এই সুবিধা গুলোর কিয়দংশ যেন অব্যাহত থাকে, তাঁর জন্যই এই চুক্তি।
(৩) মানবসম্পদ উন্নয়ন- অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে ১লক্ষ কর্মসংস্থানের একটি গোল সেট করেন। এই কাজটি করতে পারলে কমপক্ষে ১০ লক্ষ পরিবারের মোট ৫০ লক্ষ লোকের জীবনকে স্পর্শ করবে। একজন শ্রমিক মাসে ৫০ হাজার টাকা দেশে পাঠাতে পারলে মাসে ৫ বিলিয়ন টাকা ঢুকবে। সেমিনারে আনুষ্ঠানিক ভাবে ২টি সংগঠনের সমঝোতা যুক্তি হয়। তাঁর মানে এই না যে এই দুটি সংগঠনই ১ লক্ষ লোক আমদানি করার দায়িত্ব পেয়েছেন। কিছু কিছু সংবাদ মাধ্যম ভুল সংবাদ ছড়াচ্ছে। জাপানে আছে ৩০০০+ এবং বাংলাদেশে ১০০+ সংগঠন। এই কাজ সবাই মিলে করবেন। প্রতি শ্রমিক থেকে সর্বোচ্চ কতটাকা নিতে পারবেন, তা পুনঃনির্ধারিত হবে। কেউ যেন প্রতারিত না হন সে জন্য একটা মাত্র চ্যানেল থেকে তথ্য প্রদানের কথা বার্তা চলছে।
বিশ্ব কি পেল?
(৪) Nikkei Forum এ এসেছিলেন ASEAN দেশ গুলোর প্রধানমন্ত্রী/প্রেসিডেন্ট গন। সেখানে কীনোট স্পিচ দেন আমাদের দেশের প্রধান উপদেষ্টা। যদিও বাংলাদেশে এখনো non-ASEAN দেশ। বাংলাদেশ চেষ্টা করছে ASEAN এ ঢোকার। কয়েকটি টিভি চ্যানেল আলাদাভাবে ইন্টার্ভিউ নেন। ট্রাম্পের নীতি, এশিয়ার দেশগুলোর উপর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ওনার উপ্লদেশ চেয়েছেন। অনেক দেশেই Ministry of War (ডিফেন্স মিনিস্ট্রি) আছে কিন্তু Ministry of Peace নেই। এই কথাটি ফোরামের বাণী হয়ে গেছে।
প্রবাসীরা কি পেল ?
(৫) এমব্যাসি তে প্রবাসীদের সাথে মত বিনিময় হয়। প্রবাসীদের একটা অনুরোধ ছিল - নারিতা-ঢাকা বিমান রুটটা যেন চালু থাকে। উনি শুনেছেন কিন্তু এটা বাড়ির কাজ হিসাবে নিয়ে গেছেন। মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে জবাব দিবেন। এই দাবিটিতে প্রবাসীদের ইমোশন জড়িত। আশা করি, ওনার মন্ত্রণালয় বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন এবং একটা হ্যাঁ-বোধক উত্তর দিবেন -এটাই সবার প্রত্যাশা।
অল্প সময়ে অনেক অর্জন। কাছ থেকে সরকারের কাজ দেখার অল্প একটু সুযোগ হল। টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। অন্তর থেকে দুটো হাততালি দিয়ে কাল বিমানে করে টোকিও থেকে ফুকুওকা পৌঁছলাম।
১ লক্ষ মানবসসম্পদ উন্নয়নে অসাধারণ কিছু আইডিয়া নিয়ে এসেছেন জাপানি কিছু প্রতিষ্ঠান। তাঁদের উদ্দেশ্য প্রফিট ম্যাক্সিমাইযেশন নয়, সুখ ম্যাক্সিমাইযেশন। সেই কাহিনি গুলোও শেয়ার করবো। স্টে টিউন্ড।
ড আশির আহমেদ, জাপান