
গাবতলী পশুর হাঁট ইজারায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের পর এবার রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি হাট নিয়েও অভিযোগ উঠেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রশাসক মো. এজাজের বিরুদ্ধে। পছন্দের ব্যক্তিকে হাট পাইয়ে দিতে প্রশাসক নানা অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। এতে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনও হয়েছে বলে ইজারাবঞ্চিত 'চায়না বাংলা ট্রেড লিংক' কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তুলেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, দুজন দরদাতার একজন 'এসএ ব্রাদার্স' দরপত্রের সঙ্গে পে-অর্ডার জমা দেয়নি; যা টেন্ডারের শর্তভঙ্গের অন্যতম কারণ। আর 'চায়না বাংলা ট্রেড লিংক' সরকারি মূল্যের চেয়ে কিছু কম মূল্য দিয়েছে। ইজারা পেতে দুটি প্রতিষ্ঠানই দরপত্রের শর্তভঙ্গ করায় আইন অনুযায়ী পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ পূর্বের তারিখ দেখিয়ে এসএ ব্রাদার্সকে হাট ইজারা দিয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন। এই জাল-জালিয়াতির সঙ্গে সরাসরি প্রশাসক ও রাজস্ব কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ।
এদিকে হাটের অনিয়ম নিয়ে প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন খান সামি নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, 'কোরবানীর পশু বিক্রয়ের হাট ইজারাকে কেন্দ্র করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের নেতা মো. এজাজের অপতৎপরতা যেন থামছেই না। একটার পর একটা হাটের ইজারায় গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ। অভিযোগের পর টেন্ডার বাতিল এবং ত্রুটিপূর্ণ টেন্ডার এসব মিলিয়ে একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি করেছে এজাজ অ্যান্ড গং। লাগাতার এসকল অনিয়ম তুলে ধরার পরও যথাযথ কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষ মহল।'
তবে অভিযোগ বিষয়ে প্রশাসকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইজারায় অংশ নেওয়া চায়না বাংলা ট্রেড লিংকের স্বত্বাধিকারী মিজানুজ্জামান রুবেল ঢাকাটাইমসকে বলেন, 'আমার এবং অন্য আরেক প্রতিষ্ঠানের দরপত্রে ত্রুটি থাকায় সিটি করপোরেশনে রি-টেন্ডারের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তারা সেটা করেনি। বরং এসএ ব্রাদার্স ইজারা আদায় শুরু করেছে। আমি এখন আদালতে যাব।'
রুবেল অভিযোগ করে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ এবং রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন মিয়ার যোগসাজশে আমার সঙ্গে প্রতারণা করে আরেকজনকে হাট দিয়েছে। এই মামুন একসময় ছাত্রলীগ করতেন এবং তিনি সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের পিএস ছিলেন।’
ওয়ার্ক অর্ডার না পেলেও এসএ ব্রাদার্স হাটের ইজারা তোলা শুরু করেছে জানিয়ে রুবেল বলেন, ‘সিটি করপোরেশন তাদেরকে শুধু পে অর্ডারের টাকা জমা দিতে বলেছে। এরই মধ্যে তারা হাটের দখলে চলে গেছে। তার মানে এখানে স্পষ্ট আগে থেকেই সব পরিকল্পনা করা ছিল।'
ডিএনসিসির বর্তমান প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নিষিদ্ধ একটি সংগঠনের সদস্য বলে নথিসহ অভিযোগ তোলেন সাংবাদিক জুলকারনাইন খান সামি। পতিত সরকারের আমলে এজাজকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এর সঠিক ব্যাখা দিতে পারেননি প্রশাসক।
তাছাড়া গাবতলী পশুর হাটের ইজারা নিয়েও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত মোহাম্মদ এজাজ। সর্বোচ্চ দরদাতা থাকলেও তাকে হাটের ইজারা না দিয়ে নিজেরাই হাসিল আদায় করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি।
তাছাড়া কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনী কাজ করবে বলে বক্তব্য দিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেন এজাজ। তার বক্তব্যের পর সেনাবাহিনী অফিসিয়াল ফেসবুককে জানায়, 'বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই কাজের সঙ্গে অতীতে যুক্ত ছিল না। নতুন করে যুক্ত হবেও না।' এরপরেই এজাজ তার পূর্বের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।