
অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও বৈশ্বিক চাপ মোকাবিলায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) তৈরি হয়েছে ব্যতিক্রমী সংযমে। এবার মাত্র ২৮টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার একটিও মেগা প্রকল্প নয়; বরং চলমান বড় প্রকল্পগুলোয় খরচ কমিয়ে দিয়েছে সরকার।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আসছে অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ১৭১টি। এর মধ্যে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে মাত্র ২৮টি, যা মোট প্রকল্পের মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ। তার মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি থেকে বাদ পড়া প্রকল্প রয়েছে পাঁচটি। বাকি ২৩ প্রকল্প সম্পূর্ণ নতুন। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিগত শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে নেওয়া ১ হাজার ১৪৩টি প্রকল্পকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটা শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের বাজেট। বাজেট ছোট হলেও বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য হবে। বাজেটে নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে খুবই কম। পুরোনো প্রকল্পগুলোর দুর্নীতি ও অনিয়ম দেখা হচ্ছে, অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো হচ্ছে।
জানতে চাইলে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চলমান যেসব প্রকল্প রয়েছে, সেগুলো শেষ হতে আরও তিন-চার বছর লাগবে। এসব প্রকল্পে রয়েছে ৩৩ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণের বোঝা। এ অবস্থায় নতুন প্রকল্প না নিয়ে ঋণ পরিশোধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এটা সরকারের ভালো দিক।
চলমান মেগা প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে—পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা ম্যাস ট্র্যানজিট কোম্পানি প্রকল্প এবং দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় সংশোধন করা হয়েছে। ফলে চার মেগা প্রকল্পে সরকারের ৫ হাজার কোটি টাকা অপচয় রোধ হয়েছে। আর শীর্ষ ১০ প্রকল্পে খরচ কমেছে ৬ হাজার কোটি টাকা।
খরচ কমিয়ে আনা মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় কমেছে ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা, একইভাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশনের জন্য সঞ্চালন কাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ ৬৪৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা কমেছে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৫৫৭ কোটি ৭৯ লাখ কমিয়ে নতুন এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ হাজার ৯৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এমআরটিএ প্রকল্পে সামগ্রিকভাবে ব্যয় কমেছে ১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পে ৩৩৪ কোটি, এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পে ১ হাজার ৫৫১ কোটি এবং এমআরটি লাইন-৫ (নর্দান রুট) প্রকল্পে ব্যয় কমেছে ১০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় কমেছে ১৪২ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। আগামী এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ হাজার ৩১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
খাতভিত্তিক বরাদ্দ পর্যালোচনায় দেখানো হয়েছে, এডিপিতে বরাদ্দ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটির মধ্যে সরকার ১০ খাতে বরাদ্দ রেখেছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা—এর মধ্যে আবাসিক ভবন নির্মাণ খাতে ব্যয় করবে ২৮ হাজার ১৮ কোটি টাকা, সড়ক ও মহাসড়কে খরচ করবে ১৭ হাজার ৩৫৮ কোটি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি প্রকল্পে ব্যয় করবে ১৬ হাজার ৭৩ কোটি এবং ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় করবে ১৫ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা।
পরিকল্পনাসচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, এডিপিতে যত প্রকল্প রয়েছে, প্রায় সবই চলমান। এর মধ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২৫৮টি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ফলে আগামী বাজেটে নতুন প্রকল্প নেওয়ার সক্ষমতা বাড়বে।