
আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম মুখ খুলেছেন সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা নিয়ে। ইউটিউব চ্যানেলে প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন, কীভাবে ৫ আগস্টের পর তিনি একটি 'মারাত্মক পরিকল্পনার' শিকার হন এবং কিভাবে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ঘটনার দিন তিনি রাজধানীর ন্যাম ভবনের নিজ বাসায় ছিলেন। আগের রাতেও দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। কিন্তু পরদিন পরিস্থিতি এমন রূপ নেয় যে, তিনি বুঝতে পারেন ওই ভবনে তিনি একাই আছেন। স্ত্রী ও মেয়ে বারবার সতর্ক করলেও তিনি তখনও বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি।
তিনি বলেন, "আমি ভাবতাম প্রধানমন্ত্রী আছেন, নিশ্চয়ই তিনি পরিস্থিতি সামাল দেবেন। কিন্তু পরে বুঝলাম, ভবনটি প্রায় ফাঁকা। আমার স্ত্রী বলছিলেন, আশপাশে আর কেউ নেই। আমি তখনও বিষয়টি বিশ্বাস করিনি।"
পরিস্থিতি খারাপ দেখে তিনি নিজের পরিচয় গোপন রেখে ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সহায়তায় সীমান্তের দিকে রওনা দেন। একজন সাবেক এমপি ও তার ভাইয়ের সহায়তায় সীমান্ত এলাকায় পৌঁছান। সেখানেও তাকে কঠিন পরিস্থিতি পার করতে হয়।
তার ভাষায়, "ওই জায়গায় পৌঁছানোর পর যাদের মাধ্যমে সীমান্ত পার হতে হয়, তারা আগে টাকা ছাড়া কিছু করত না। কিন্তু আমার কাছে তখন কিছুই ছিল না। তাদের দয়াতেই হয়তো, আমাকে এক গাছবাগানের ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কর্দাময় পুকুরে প্রায় তিন ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলাম। তারকাঁটার আঘাতে শরীর ছিঁড়ে গিয়েছিল।"
চার ঘণ্টার প্রচেষ্টায় তিনি সীমান্ত পার হন এবং ওপারে যোগাযোগ করে একজনের সহায়তায় এক বাড়িতে আশ্রয় নেন। বাড়িটির মালিক ছিলেন বাংলাদেশের এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। পরে সেখান থেকে দলের কয়েকজন নেতার সহায়তায় তিনি কলকাতায় আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
কলকাতায় অবস্থানকালীন তিনি ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে পাসপোর্টে অ্যারাইভাল সিল ও এক্সিট পারমিশন সংগ্রহ করে আরেকটি দেশে পাড়ি জমান, যদিও সেই দেশের নাম প্রকাশ করেননি।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, “পুরো অভিজ্ঞতা যেন স্বপ্নের মতো। মনে হয়েছে মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছি। প্রতিটি ধাপে আল্লাহর কুদরতের সহায়তা ছাড়া এটা সম্ভব হতো না।”