
বাংলাদেশ ব্যাংকে ১২ বছর ধরে মো. আবদুল ওয়ারেশ আনসারী নামে চাকরি করছিলেন এক ব্যক্তি। অথচ তিনি আসল ওয়ারেশ আনসারী নন। বিভিন্ন তদন্তের পর বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। এক অভ্যন্তরীণ তদন্তে বিষয়টি উদ্ঘাটিত হলে গতকাল বুধবার প্রতারক ওয়ারেশ ও তার চাচা শাহজাহান মিয়াকে বরখাস্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তথ্য বলছে, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) মো. আবদুল ওয়ারেশ আনসারী ২০১৩ সালে ৩১তম বিসিএস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় তিনি চাকরি হিসেবে বিসিএসকেই গুরুত্ব দেন। কিন্তু তারই নাম ও ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে প্রতারক আনসারী ২০১৩ সালের ২২ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন।
তদন্তে দেখা যায়, প্রতারক আনসারীর এই কাজে সহযোগিতা করেছেন তার চাচা ও তৎকালীন নিয়োগ শাখার উপপরিচালক মো. শাহজাহান মিয়া, যিনি পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অভ্যন্তরীণ তদন্তে বিষয়টি বেরিয়ে এলে গতকাল বুধবার প্রতারক ওয়ারেশ আনসারীকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই প্রতারক পদোন্নতি পেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রাজশাহী অফিসে যুগ্ম পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একই সঙ্গে এই প্রতারণায় সহযোগিতা করার অপরাধে অতিরিক্ত পরিচালক মো. শাহজাহান মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তদন্তে তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে স্থায়ী বহিষ্কারাদেশসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান কালবেলাকে বলেন, প্রতারক ওয়ারেস আনসারীর চাকরির নিয়োগ এরই মধ্যে বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার এসব কাজে সহযোগিতার সন্দেহে মো. শাহজাহান মিয়াকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ, তিনি নিয়োগ শাখায় ওই সময় কর্মরত ছিলেন। তারা দুজন আত্মীয়ও। এজন্য আমাদের অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসল মো. আবদুল ওয়ারেশ আনসারী (এডিসি) বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২৮ মে তাকে বিষয়টি জানালে তিনিই প্রথম জানতে পারেন যে, তার নাম-পরিচয় ব্যবহার করে দীর্ঘদিন কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।
এডিসি আনসারী জানান, তিনি ২০১৩ সালে ৩১তম বিসিএস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদে উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, তবে তিনি প্রশাসন ক্যাডার বেছে নেন।
তিনি বলেন, ‘আমি কখনো বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করিনি। জানতামই না যে কেউ আমার পরিচয় ব্যবহার করে চাকরি করছে। আজ (বুধবার) আমি জানতে পারি। মূলত আমি একই সঙ্গে দুটি পরীক্ষাই দিয়েছিলাম। কিন্তু বিসিএসে আগে যোগদান করি। পরে আমি কুড়িগ্রামে কর্মরত অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগপত্র আসে। এজন্য আর যোগদান করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্ভবত ২০১৩ সালের মার্চের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগদানপত্র পেয়েছিলাম। আমি যোগদান না করায় তারা এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানতে পারলাম, তারা আমার যোগদানপত্র এমনকি আমি যে খাতায় পরীক্ষা দিয়েছি, ওটাই ব্যবহার করা হয়েছে। এটা বড় ধরনের প্রতারণা। এটা ধরতে এত বছর লেগেছে দেখেই আমি আশ্চর্য।’
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, শাহজাহান মিয়াই এই প্রতারণার মূল হোতা। তাকে গতকাল সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রতারক আনসারী ২৭ মে পর্যন্ত চাকরিতে ছিলেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে চাকরিচ্যুত করে।
এ বিষয়ে কথা বলতে প্রতারক আনসারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শাহজাহান মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।