
জারিন রশ্মির বয়স মাত্র ১১, মেজো ছেলে আফনান আল জামানের বয়স আট বছর ও ছোট্ট গালিব আবরাবের বয়স মাত্র ১৩ মাস। এতটুকু বয়সেই বাবাহারা এই তিন শিশু। রোজ রাতে বাবার সঙ্গে ঘুমানোর বায়না ধরে জারিন ও গালিব।
সকালে ঘুম ভাঙলে বাবাকে না পেয়ে রোজই মন খারাপ করে থাকে এই এতিম ভাইবোন। তাদের এই কাকুতি-মিনতি পরিবারের অন্যদেরও শোককে জাগিয়ে তোলে। বলছি জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া মো. কামরুজ্জামানের (৩০) পরিবারের কথা।
গত বছরের ৪ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। মাথায় ও শরীরে আটটি গুলিতে বিদ্ধ হন তিনি। এদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৫ দিন নিখোঁজ ছিলেন কামরুজ্জামান। পরে ১৯ আগস্ট রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার লাশ পাওয়া যায়। একদিন পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
শহীদ কামরুজ্জামান ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চর কামারিয়া গ্রামে সৌদি আরব প্রবাসী মো. আব্দুর রাজ্জাকের দ্বিতীয় ছেলে। দাম্পত্য জীবনে কামরুজ্জামান দুই ছেলে ও এক মেয়ে মেয়ের বাবা। বাবাহারা সন্তানদের এখন একমাত্র সঙ্গী মা সামিরা জাহান পপি। স্বামীকে হারিয়ে তিন শিশু সন্তান নিয়ে বিপাকে এই নারী।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শহীদ কামরুজ্জামান ঢাকার উত্তরায় ভাড়া বাসায় থেকে প্রাইভেট কার চালাতেন। তবে জুলাই বিপ্লবের কিছুদিন আগে তিনি পোল্যান্ড যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। এরই মাঝে দেশে আন্দোলন শুরু হলে রাজধানীর উত্তরায় ছাত্রদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন।
জানতে চাইলে কামরুজ্জামানের স্ত্রী শারমীন জাহান পপি বলেন, প্রতিদিনই স্বামীর সঙ্গে কথা হতো। গত ৪ আগস্ট ব্যস্ততার কারণে সকালে আমার কথা হয়নি। পরে বেলা ২টার দিকে কল দিলে অপরিচিত এক ব্যক্তি রিসিভ করে জানান, কামরুজ্জামান আহত হয়েছেন। আমার স্বামী কোথায় তা আর তিনি বলতে পারেননি। এরপর থেকে আমার স্বামীর ফোনটাও বন্ধ ছিল। আমরা সরকারি যত মেডিকেল আছে সবগুলোতে খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাইনি। এরপর ১৯ আগস্ট ঢাকার শেরেবাংলা থানার উপপরিদর্শক মুহিবুল্লাহ আমার স্বামীর মৃত্যুর বিষয়টি অবগত করেন। পরে আমরা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে লাশ গ্রহণ করি।
পপি বলেন, দাফনের আগে মাথা ও শরীরজুড়ে আটটি গুলির রক্তাক্ত ক্ষত দেখতে পাই। আমার স্বামী দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। এখন আমি চাই সরকার আমার সন্তানদের দায়িত্ব নিক। পপির বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ ঘটনায় ময়নাতদন্ত করে লাশ দাফন করা হয়েছে। আমরা চাই বাবাহারা এই এতিমদের পাশে দাঁড়াক সরকার।
এ বিষয়ে গফরগাঁও উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের চরকামারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে পুলিশের এক কর্মকর্তা আমার কাছে ফোন করে কামরুজ্জামানের ছবি পাঠায়। ওই ছবি দেখে চিনতে পেরে কামরুজ্জামানের পরিবারকে জানাই। তারা লাশ শনাক্ত করে বাড়িতে এনে দাফন করে।