Image description

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছে সরকার। এর বিপরীতে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়াবে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, ঘাটতি পূরণে দেশি উৎস থেকে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি উৎস থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে।

বাজেট ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা সাধারণত জিডিপির ৫ শতাংশের কাছাকাছি রাখা হয়; কখনও একটু বেশি, কখনও কম। তবে আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ঋণই আসবে দেশীয় উৎস থেকে, যার সিংহভাগই নেওয়া হবে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে। তবে ঘাটতি কমাতে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের প্রবণতাও কিছুটা কমানো হবে।

সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়াবে এক লাখ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রার (১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি) তুলনায় প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা কম এবং সংশোধিত বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার (৯৯ হাজার কোটি) থেকে একটু বেশি।

নন-ব্যাংক খাত থেকে ২১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত লক্ষ্যমাত্রার (২১ হাজার ৪০০ কোটি) তুলনায় কিছুটা কম এবং সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার (১৮ হাজার কোটি) থেকে বেশি।

নন-ব্যাংক খাতের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ১২ হাজার ৫০০ কোটি এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার কোটি, যা সংশোধিত বাজেটে কমে ১৪ হাজার কোটি, এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা থেকে কমে ৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছিল।

সূত্র আরও জানিয়েছে, সরকার বিদেশি উৎস থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে এক লাখ কোটি টাকা ঋণের মাধ্যমে নেওয়া হবে, যা চলতি অর্থবছরের ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার চেয়ে কম। অনুদানের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চার হাজার ৪০০ কোটি টাকার চেয়ে বেশি এবং সংশোধিত বাজেটেও একই রয়েছে।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুন পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালের জুনের ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকার থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বৈদেশিক ঋণও চার বছরে প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে; ২০১৯ সালে এটি ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছোট হবে, সঙ্গে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিও ছোট হবে। তবু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ২৩ হাজার কোটি এবং সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রস্তাবিত লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা।