Image description

Maskwaith Ahsan (মাস্কওয়াইথ আহসান)


 
২০০৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশে ভারতীয় আগ্রাসনবাদ প্রকাশ্য হলে; হানি ট্র্যাপ নামের নতুন প্রপঞ্চটি হাজির হয় পাওয়ার করিডোরে। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ট দেশ হওয়ায়; এক প্রচ্ছন্ন রক্ষণশীলতা কাজ করে আমাদের সমাজে। ফলে "নারী" অনেকটা আকাশের চাঁদের মতো দুষ্প্রাপ্য পুরুষের জীবনে।
 
বিশেষ করে যারা গ্রন্থকীট, একটু লাজুক প্রকৃতির ছেলে; ছাত্রজীবনে তাদের খুব একটা বান্ধবী হয় না। হলেও তারা এসে পড়াশোনার সাহায্য নিয়ে ফিরে যায়।
 
আর যারা বখাটে ছেলে; তাদের ভবিষ্যত নেই ভেবে মেয়েরা খুব একটা তাদের ধারে কাছে ভিড়ে না। বখাটে হয়তো প্রেমিক মন নিয়ে ঘুরে; কিন্তু মেয়েরা তাদের খলনায়ক ভেবে দূরে দূরে থাকে।
 
বাংলাদেশের পাওয়ার করিডোরে গ্রন্থকীট লাজুক ছেলেরা আসে বিসিএস দিয়ে। আর বখাটেরা এমপি-মন্ত্রী হয়ে আসে। এই দুটি বৃত্তের জীবনে নারী অচেনা গ্রহ হয়ে রয়ে যায়।
 
অনেক কষ্ট করে বিসিএস পাশ করে একজন স্ত্রী জুটলেও; সেই স্ত্রী বিসিএস স্বামীর ক্ষমতার বাতাসে অত্যন্ত অহংকারী হয়ে ওঠে। তার তখন ছেলেমেয়েকে দামী স্কুলে পড়ানো; স্বামীর পোস্টিং যেখানেই হোক, ঢাকায় থাকা; এরপর আত্মীয় স্বজনের কুবুদ্ধিতে আমেরিকা ও ক্যানাডায় যাবার বাতিক ওঠে। স্ত্রীর মাথায় যেহেতু সারাক্ষণ পার্থিব চাওয়ার ভিড়; তাই কর্মকর্তার রোমান্টিক মন ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়।
 
আর বখাটে ছেলে এমপি-মন্ত্রী হবার পর; তার স্ত্রী হয়ে পড়ে খাজাঞ্চি বেগম। ক্যাশিয়ার হয়ে দুর্নীতির টাকা গুনতে থাকে আর সেকেন্ড হোম কেনার শলাপরামর্শ করতে থাকে। স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলেই তদবির আর টেকাটুকার গল্পে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এমপি ও মন্ত্রী।
এই সাইকো এনালাইসিস গড়-পড়তা মানুষের জীবনের। ব্যতিক্রমীরা এর মাঝে নিজেকে টেনে গোস্বা হবেন না সেটাই প্রত্যাশিত।
 
বাংলাদেশের এভারেজ সংস্কৃতি সমাজের দৌড় ঢাকা-টু কলকাতা। ফলে ভারতীয় দূতাবাসের নেমন্তন্ন পাওয়া মানেই আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠা; এমন একটি কষ্টকল্পনা রয়েছে সংস্কৃতি মামা ও খালাদের। ২০০৯-২৪ হানি ট্র্যাপের ট্যালেন্ট হান্টিং চলতে থাকে জোরে শোরে। একটু টান দিয়ে দিয়ে নদীয়ার বাংলায় কথা বলতে শেখা, টালিউডের নায়িকাদের মতো সাজ পোশাক, খানিকটা বলিউড মিশেলের মাঝ দিয়ে তৈরি হয় ফাঁদে ফেলার উপযুক্ত ললিতলোভনকান্তি টোপগুলো।
 
সচিবালয়ে কিংবা পুলিশের দপ্তরে দুপুরের লাঞ্চের পর অফিসারের ঝিমুনি এলে হঠাত মে আই কাম ইন বলে সুজানা কিংবা সিনথিয়া এসে পড়লে; অফিসারের কাজকর্ম চাঙ্গে ওঠে। ছাত্রজীবনের অনিষ্পন্ন আকাংক্ষার গার্ল ফ্রেন্ড অফিস কক্ষে যেন চপল কাঠবেড়ালির মতো ঘুরতে থাকে। অথবা হোয়াটস এপে প্রজাপতি চুম্বনে "বৃষ্টি তোমাকে দিলাম" উচ্ছলতায় কর্মকর্তা আলুথালু হয়ে যায়। পুরুষ মানুষ নারীর মনোযোগ পেলে তখন তার গোপন কথা জানতে প্রশ্ন করতে হয়না। নিজের বাঘ মারা আর বাহাদুরির গল্প বলতে বলতে সমস্ত স্টেট সিক্রেসি উজাড় করে দেয়। তারপর নিজেই ঠিক করে কোন রেস্ট হাউজে দেখা হবে। সেইখানে সিনথিয়ার দায়িত্ব শুধু ভিডিও করা; বেশি কিছু না; অফিসার শার্ট খুলে বসে আছে; এটুকু ভিডিও থাকলেই; কাঁচামালেরা এরপর থেকে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে করে পলিসি লেভেলে নিজেদের কাজগুলো করিয়ে নিতে পারে। স্ত্রীর ভয়ে ও লোকসমাজে রি রি পড়ে যাওয়ার ডরে অফিসার হয়ে পড়ে পোষমানা বেড়াল। আর এমপি ও মন্ত্রী হয়ে পড়ে ভেজা বেড়াল।
এই হানি ট্র্যাপের কারণে অসংখ্য কর্মকর্তা ও রাজনীতিক স্বদেশের বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য হয়েছে।
 
কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন দূতাবাসের পার্টিতে এন্ট্রি নিয়ে নেয় সিনথিয়া-সুজানা। কাঁচামালের হ্যান্ডলারদের নির্দেশে তারা বিদেশী দূতদের হানি ট্র্যাপে ফেলে বাংলাদেশের ফরেন পলিসিতে নানা প্রতিবন্ধক তৈরি করে।
রাশিয়ার কেজিবি এই হানি ট্র্যাপ কৌশল অনুসরণ করে। তাকে দেখে ভারত ও পাকিস্তানের অপেক্ষাকৃত গরীব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই কৌশল অনুশীলন করতে শুরু করেছে। তাদের তো আর ধনী দেশের সি আই এ, মোসাদ, এম আই সিক্সের মতো হাই টেক গোয়েন্দাবৃত্তি করার সামর্থ্য নাই।
 
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে যেসব কর্মকর্তা ও নতুন রাজনীতিকেরা বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে কাজ করতে শুরু করেছেন; তাদেরকে খুবই সাবধান থাকতে হবে এই হানি ট্র্যাপের ব্যাপারে। মনে রাখতে হবে আগন্তক কখনো চট করে বন্ধু হতে পারে না। বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র আয়তনের দেশে আগন্তক সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া খুবই সহজ। কারো আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ গ্ল্যামার থাকা মানেই সেখানে ঝুঁকি রয়েছে।
 
অনেক ব্যস্ততার মাঝে অবসরগুলোতে বই পড়া, মুভি দেখা, ইনডোর বা আউটডোর গেমসে সক্রিয় থাকা, ছাত্রজীবনের পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে মাঝে মাঝে গল্পগুজব করা এসব স্বাস্থ্যপ্রদ চর্চা হানি ট্র্যাপের মতো ঝামেলা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে। আর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট কালের কর্মকর্তা ও রাজনীতিকদের দুর্নীতির পরিণতির কথা স্ত্রীর সামনে তুলে ধরে; তাকে মধ্যবিত্ত জীবনে অভ্যস্ত হতে বলতে হবে। স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশতে পারলে; তারসঙ্গে সারাক্ষণ সাংসারিক খুঁটিনাটির আলাপ না করে, কবিতা, গল্প, সংগীত, চলচ্চিত্র, রাজনীতি ও সমাজ নিয়ে আলাপ আলোচনার অভ্যাস গড়ে তুললে; জীবন বোরিং হবার কথা নয়।
 
আর বাইরে মেলামেশার সময়, নট সো ফার নট সো নিয়ার পদ্ধতিতে কথাবার্তা বললে যে কোন হানিট্র্যাপ এড়িয়ে চলা সম্ভব। যে হানিট্র্যাপ করতে আসে, সে যদি বুঝতে পারে লোকটা নিপাট ভদ্রলোক ও ফেয়ার; সেও শুভাকাংক্ষী হয়ে উঠতে পারে। পৃথিবীটা শুভ-অশুভ, ভালো-খারাপ এরকম ভাগে বিভক্ত নয়। প্রতিটি মানুষের মাঝ থেকে গুড উইল জেশ্চারের মাধ্যমে ভালো মনটিকে বের করে আনা সম্ভব।