Image description
 

‘বিএনপির রাজনীতিও আওয়ামী লীগের টাকায় চলে’, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর এমন বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কুমিল্লা বিভাগ বিএনপি। এক সপ্তাহের মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে হাসনাত আবদুল্লাহর কুমিল্লার রাজপথে জায়গা থাকবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।আজ সোমবার (১৯ মে) বিকেলে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি কুমিল্লা বিভাগীয় ও জেলার নেতারা এই আলটিমেটাম দেন। একই সঙ্গে হাসনাতের বক্তব্যকে ‘শিশুসুলভ, রাজনৈতিক অপরিপক্বতা এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে বিএনপি।

 

এর আগে গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে ‘জুলাই সমাবেশে’ সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা আয়োজিত সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যের একাংশে হাসনাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও তাঁদের অর্থদাতারা এখনো অক্ষত রয়েছেন। আমি এখন যেহেতু কুমিল্লা রয়েছি, তাই কুমিল্লাকে নিয়ে বলতে চাই, কুমিল্লার অনেক উপজেলা রয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতিও আওয়ামী লীগের টাকায় চলে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, অতি দ্রুত আওয়ামী লীগের অর্থকাঠামো ধ্বংস করে দিতে হবে। আওয়ামী লীগের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। তাদের অর্থকাঠামো ঠিক রেখে আপনি কখনোই যথাযথ সংস্কার করতে পারবেন না।’

এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আজ বিএনপির কুমিল্লা বিভাগের (সাংগঠনিক) ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‌‍সম্প্রতি হাসনাত আবদুল্লাহ একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, কুমিল্লার বিএনপির নেতা–কর্মীরা আওয়ামী লীগের টাকায় রাজনীতি করেন। এ ধরনের বক্তব্য শুধু মিথ্যাচার নয়, এটি একটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিভ্রান্তিকর উক্তি। এটি বিএনপি নেতা–কর্মীদের ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। রাজনীতিতে অপরিপক্বতার কারণে হাসনাত এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। তাঁর মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন। একজন দলীয় মুখপাত্র হিসেবে তাঁর এ ধরনের বক্তব্য শুধু লজ্জাজনক নয়, রাজনৈতিক পরিবেশ বিনষ্ট করার অপচেষ্টা বলেও তাঁরা মনে করেন।

সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘যে ব্যক্তি কিংস পার্টি নামে পরিচিত এনসিপির মুখপাত্র হয়ে এমন দায়িত্বহীন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেন, তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে এ ধরনের ছেলেমানুষি, অপরিপক্ব রাজনীতিবিদদের মাঠ থেকে সরিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা।’

দেশের বিভিন্ন সংকটে কুমিল্লার বিএনপি নেতা-কর্মীরা জীবন বাজি রেখে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন উল্লেখ করে সেলিম ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে কুমিল্লায় বিএনপি যে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, তা ঐতিহাসিক। এই আন্দোলনে আমাদের নেতা–কর্মীরা শহীদ হয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন, কিন্তু পিছপা হননি। সেই বিপ্লব ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের লক্ষ্যে জনগণকে জাগিয়ে তোলে।’

হাসনাত আবদুল্লাহকে এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়ে সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘এই বক্তব্যের জন্য তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। যদি তিনি তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন এবং ক্ষমা না চান, তাহলে কুমিল্লায় তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা তাঁকে এই সুযোগ দিচ্ছি, কিন্তু সময়সীমা অতিক্রান্ত হলে কুমিল্লার রাজপথে তাঁর জায়গা থাকবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিন-উর রশিদ (ইয়াছিন), কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের, যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান আমীর, সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।