
বাংলাদেশে প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর যে তাড়া থাকে, প্রকল্প অনুমোদনের পর নির্দিষ্ট সময়ে সেই কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই ধীরগতি থাকে। মেয়াদ শেষ হয়, কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না। বাধ্য হয়ে মেয়াদ ও অর্থ বাড়াতে হয় সরকারকে।
আসছে ২০২৫-২৬ নতুন অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৪০৪টি মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প যোগ হচ্ছে। এ প্রকল্পগুলোকে তারকা চিহ্ন দিয়ে রাখতে বলেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আজ রোববার পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে নতুন অর্থবছরের এডিপি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
আজকের এনইসি সভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বা এডিপি অনুমোদন দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সভায় সভাপতিত্ব করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও এনইসি চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ৬ মে এডিপি দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নতুন অর্থবছরের জন্য এক হাজার ১৭১টি প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। তাছাড়া আগামী অর্থবছরের মধ্যে ২৫৮টি প্রকল্প বাধ্যতামূলকভাবে শেষ করার কথা বলা হয় সভায়।
নতুন অর্থবছরের জন্য ৪০৪টি প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রস্তাবিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চলতি অর্থবছরে জুনের মধ্যে ২৫টি প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল, আবার সংশোধিত উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) থেকে বাদ পড়েছিল পাঁচটি প্রকল্প। এ প্রকল্পগুলোকেও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে বর্ধিত সভায়।
মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর ফলে কী ধরনের সমস্যা হয়Ñ এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমার দেশকে বলেন, এডিপিতে প্রায় ১২০০ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত আছে। তার মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ৪০০। যা এডিপি প্রকল্প ব্যবস্থাপনার একটা বড় দুর্বলতাই ইঙ্গিত দেয়। যেসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, তার ব্যয় কতটা বেড়েছে সে বিষয় জানা জরুরি।
গত প্রায় তিন বছর যাবৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকোচনের মধ্যে রয়েছে। ফলে সরকারও সংকোচন নীতিতে রয়েছে। সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতিও ধীর হয়েছে। চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এক অর্থবছরে এত কম বাস্তবায়নের নজির আর দেখা যায়নি।
এডিপি কম বাস্তবায়নের কারণ হিসেবে ৬ মের বর্ধিত সভায় বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সদস্য (সচিব) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, যেসব প্রকল্পের মেয়াদ শুধু বিল পরিশোধের কারণে বৃদ্ধি করতে হচ্ছে, সেসব প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি না করে বিল পরিশোধ করার বিকল্প পদ্ধতি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে রাজস্ব খাতেও ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ফলে সামগ্রিকভাবে শুধু বিল পরিশোধের কারণে প্রকল্পের মোট বরাদ্দ বাড়ছে। বিকল্প পদ্ধতিতে বিল পরিশোধ করা সম্ভব হলে প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বৃদ্ধি পাবে না বলে জানান তিনি।
এ সময় ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) এমএ আকমল হোসেন আজাদ বলেন, অনেক প্রকল্প রয়েছে, যা বছরের পর বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে চলমান রাখা হচ্ছে। এসব প্রকল্প দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ বলেন, প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প গ্রহণ, প্রকল্প পরিচালনাসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ আয়োজনসংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নতুন অর্থবছরে এডিপির আকার দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। আগের অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়েছে। নতুন এডিপিতে ৭৯টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মধ্যে।