
দেশে ৩ কোটির বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন এই রোগের শিকার। আক্রান্তদের ৫৯ শতাংশ জানেনই না যে তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। আক্রান্ত জানলেও অনেকেই নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন না। অবহেলায় উচ্চ রক্তচাপ ডেকে আনছে স্ট্রোক, কিডনি, হৃদরোগের মতো নানা ব্যাধি।
এ পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘রক্তচাপ সঠিকভাবে মাপুন, নিয়ন্ত্রণ করুন, দীর্ঘজীবী হোন’। দিবস উপলক্ষে সচেতনতামূলক র্যালি, সেমিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও বিভিন্ন সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে প্রায় ১২৮ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। প্রতি বছর উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণে মারা যাচ্ছেন প্রায় ১ কোটি মানুষ।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপ মানুষের শরীরে নীরব ঘাতকের মতো কাজ করে। দেশের ২০-৩০ শতাংশ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অনেক সময় মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা হয়। কিন্তু অনেক সময় কোনো উপসর্গ থাকে না, এ জন্য আক্রান্ত হলেও মানুষ বুঝতে পারে না। তাই মাঝে মাঝে রক্তচাপ মেপে দেখতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে। এর পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, মদ্যপান ও ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।’
বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপে (২০১৭-১৮) দেখা গেছে, দেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সি ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। উচ্চ রক্তচাপ পুরুষের চেয়ে নারীর বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, দেশে ১৮ বছরের বেশি জনসংখ্যা ১১ কোটি ১৮ লাখ ৯৬ হাজার। সেই হিসাবে ৩ কোটির বেশি মানুষ এই দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত। এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, অনেকে রোগ আছে জেনেও চিকিৎসা নিচ্ছেন না। আবার চিকিৎসা নিয়েও অনেকে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। ওষুধের দাম, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ওষুধ না পাওয়ার কারণে হয়তো কেউ কেউ মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করছেন। আবার এমনও হতে পারে যে অনেকে জানেন না যে ওষুধ দীর্ঘকাল খেয়ে যেতে হবে। দেশে কিডনি রোগ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ বৃদ্ধিকে মনে করা হয়। সরকারের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্তরে উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা ও চিকিৎসা চালু রয়েছে। তবে এই উদ্যোগের পরিধি ও কার্যকারিতা রোগীর সংখ্যার তুলনায় কম বিস্তৃত।
উচ্চ রক্তচাপ শনাক্তকরণ ও নিয়ন্ত্রণে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন দেশের ৪৪টি জেলার ৩১০টি উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে দেশের প্রায় ১৮২টি উপজেলার সব কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি গ্রুপ ও সাপোর্ট গ্রুপের সঙ্গে জনসচেতনতামূলক মতবিনিময় করা হয়েছে। এসব উপজেলার ১০ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মীকে উচ্চ রক্তচাপ পরিমাপ ও এ সংক্রান্ত ওষুধ নির্দেশনা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে রক্তচাপ মাপা, জীবনধারা পরিবর্তনের পরামর্শ, চিকিৎসকের কাছে রেফার করা ও সচেতনতা তৈরির কাজগুলো নিয়মিতভাবে করে যাচ্ছে প্রশিক্ষিত কর্মীরা।’ তিনি আরও বলেন, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রেজিস্টার্ড ৮ লাখের বেশি মানুষ এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে রোগীদের বিনামূল্যে ৫টি ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।