
অভাবের সংসার। তাই নাটোর থেকে ঢাকায় এসে জামায়াতকর্মী রমজান আলী একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি নেন। এরপর করেন বিয়ে। কিছুদিন পর ঘরে আসে একটি কন্যা সন্তান। তখন খরচ বেড়ে যায়।
বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে পাড়ি জমান সৌদি আরব। সেখানেও বেশিদিন থাকেননি। ফিরে এসে ঢাকার আশুলিয়ার বাইপাইলে একটি মাছের আড়তে কাজ শুরু করেন। স্ত্রী কাজ নেন গার্মেন্টসে। দুজনের আয়ে সচ্ছলতা ফিরে আসে সংসারে।
কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট পুলিশের গুলি তছনছ করে দেয় রমজানের সাজানো সংসার। তাকে হারিয়ে শোকে এখনো কাতর পরিবারের সদস্যরা। তারা চান দৃষ্টান্তমূলক বিচার।
জানা যায়, নজরুল ইসলাম ও অজুফা বেগমের ছয় ছেলে-মেয়ের অন্যতম ছিলেন রমজান আলী। এইচএসসি পাস করে নাটোর থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। কাজ নেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এরপর বিয়ে করেন। ঘর আলো করে আসে সুকন্যা। অভাবের সংসারে খরচ আরো বাড়ে। তাই তিনি পাড়ি জমান সৌদি আরবে। কিন্তু বেশি দিন না থেকে ফিরে আসেন ঢাকায়। এবার বাড়িতে থেকে নতুন সংগ্রাম, কাজ শুরু করেন রাজমিস্ত্রির। কিছুদিন পরে আবারো পেশার পরিবর্তন। ঢাকার বাইপাইলে যোগ দেন মাছের আড়তে আর স্ত্রী একটা গার্মেন্টসে। দুজনের উপার্জনে মেয়েকে নিয়ে চলছিল সুখের সংসার। মাঝে মাঝে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতেন। সুযোগ পেলেই মায়ের হাতে তুলে দিতেন কষ্টার্জিত টাকা। এভাবেই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু হঠাৎ তাদের জীবনের ছন্দ হয়ে যায় এলোমেলো। জুলাই বিপ্লব শুরু হলে আন্দোলনে যোগ দেন রমজান।
সহযোদ্ধারা জানান, ৫ আগস্ট ঢাকার বাইপাইলে আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন রমজান আলী। সেদিন পুলিশের গুলি বুকের বাম পাশ দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। রাজপথ ভেসে যায় শ্রমজীবী রমজানের তাজা রক্তে। গুরুতর আহত রমজানকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
আদরের সন্তানকে হারিয়ে এখনো শোকে কাতর মা অজুফা বেগম। তিনি বলেন, গত ঈদেও বাড়ি এলে আমি রমজানকে ভাত মাখিয়ে মুখে তুলে খাইয়েছি। ও ছিল আমার আদরের ধন। আমার ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। দেশের জন্য সে রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে। আমার ছেলের রক্তে নতুন প্রাণে জেগে উঠুক বাংলাদেশ।
শহীদ রমজানের বাবা নজরুল ইসলাম সন্তান হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, আমি জুলাইয়ের সব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। সবার জীবন উৎসর্গের স্বীকৃতি চাই।
বিভিন্ন দল সহায়তা দিয়েছে জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, জামায়াত দুই লাখ টাকা এবং বিএনপি এক লাখ ও জেলা প্রশাসন ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে দিয়েছে ৫ লাখ টাকার চেক। গত ঈদেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, জামায়াত, উপজেলা প্রশাসন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বাড়িতে উপহার পাঠানো হয়েছে।