Image description

Maruf Kamal Khan ( মারুফ কামাল খান)

সাগর-রুনি দম্পতি, আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ, যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমান, সাংবাদিক কাজল, রুহুল আমিন গাজীর সঙ্গে হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিম কী আচরণ করেছে? কতগুলো নিউজপেপার ও টিভি চ্যানেল বন্ধ ও দখল করে নিয়েছে? কত সাংবাদিক খুন-নির্যাতনের শিকার হয়েছে? কেউ টু-শব্দটিও করেনি।
 
আমি একজন সাংবাদিক। লেখা ছাড়া আর কোনো এক্টিভিজমে জড়াইনি কখনো। আমার রাজনৈতিক মতও আমি লিখেই প্রচার করেছি। আমি সাংবাদিক ইউনিয়ন ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য। অথচ আমার বিরুদ্ধে মার্ডার, বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ ও সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে শতাধিক মামলা হয়েছে। মিথ্যা মামলা ও চক্রান্তে আমার পারিবারিক জীবন ছত্রখান করা হয়েছে। সব অভিযোগই ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। আইনের আদালতে তা প্রমাণিত হয়েছে। আমি যে সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলাম তা' প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু যে হেনস্তা, ভোগান্তি ও ক্ষয়ক্ষতি আমার হয়েছে তা কি কেউ পূরণ করতে পারবে?
 
তখনো মাহফুজ আনামেরা ছিলেন, সাংবাদিকতার নামে এন্তার সংগঠন ছিল। কেউ সে অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে টু-শব্দটিও করেনি। অথচ মাহফুজ আনাম বিপন্ন হলে আমি তার পক্ষে দাঁড়িয়েছি। এখন আবার বোল ফুটেছে মাহফুজ আনামের মুখে। সময় ও পক্ষ বুঝে এদের সোচ্চার হওয়া এবং নীরব থাকার বিকৃত নৈতিকতা ও অসততার আমি নিন্দা জানাই। ফ্যাসিবাদের হত্যা-নির্যাতনকে সাংবাদিকতার নামে উস্কে দেওয়ার বিরুদ্ধে মাহফুজ আনামেরা কখনো উচ্চকিত হননি। দুর্নীতি-অনিয়ম করে অসৎ পথে সাংবাদিকতার আড়ালে বিপুল বিত্তবেসাতের মালিক হয়েছে ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহকেরা। কখনো মাহফুজ আনামেরা সে অনৈতিকতা নিয়ে প্রশ্নও তুলেন নি। মাহফুজ আনামের পক্ষে সেদিন আমি যা লিখেছি তা নিচে তুলে দিলাম। কিন্তু ওরা আমার বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের সামান্যতম কোনো প্রতিবাদও কখনো করেনি।
 
মাহফুজ আনাম বিষয়ক কথকতা ????
▪️
হেজিপেঁজি লোক নন তিনি। রীতিমত কেউকেটা গোছের মহাশক্তিধর এক ব্যক্তি। কাউকে তেমন পরোয়া করে চলেন না তার কথায়, লেখায়, এমন-কি অঙ্গভাষাতেও। থোরাই পরওয়া করার একটা হাবভাব ফুটে ওঠে সারাক্ষণ তার চলনে-বলনে-ভঙ্গীতে।
তিনি সাহসী নাকি দুর্বিনীত সেটা নিয়ে তর্ক চলতে পারে। বস্তুনিষ্ঠ-নিরপেক্ষ সৎ সাংবাদিকতা তিনি করেন, এমন কথা হলফ করে বলার উপায় নেই। তার সাংবাদিকতা উদ্দেশ্যপূর্ণ। রাজনীতিতে তিনি পক্ষ নেন। সামাজিক বিভিন্ন প্রসঙ্গে তিনি তার নিজস্ব একটি লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত করতে চান জনমতকে। সেই লক্ষ্যে তিনি তার সংবাদ-প্রতিষ্ঠান এবং সম্পাদকীয় কর্তৃত্বকে কাজে লাগান। তিনি নিছক সংবাদ-বেনিয়া নন। তার সাংবাদিকতার পক্ষ আছে, উদ্দেশ্য আছে এবং লক্ষ্য আছে। এর সবকিছুই যে মহৎ এবং স্বার্থচিন্তামুক্ত তা-ও আমি মনে করিনা।
 
তবে মাহফুজ আনাম ও তার সাংবাদিকতা সম্পর্কে আমার এমন ধারণা সত্বেও আমি বিশ্বাস করি, তার এই সব কাজ অবাধে করে যাবার অধিকার ও স্বাধীনতা অবশ্যই থাকা উচিত।
আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, সভ্যসমাজে সকলের স্বাধীনতা ও অধিকার আইন দিয়েই নির্ণীত, সংরক্ষিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। কাজেই কেউ যদি মাহফুজ আনামের প্রচারণায় ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন তাহলে তার ব্যক্তিগতভাবে আদালতে প্রতিকার চাইবার সুযোগ থাকা উচিত। কিন্তু ক্ষমতার ইশারায় গণমামলা দায়েরের উদ্দেশ্য যে হেনস্তা ছাড়া আর কিছু নয় তা সকলের কাছেই পরিষ্কার।
ডেইলি স্টারকে কেউ খারাপ সংবাদপত্রও ভাবতে পারে। তবে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে মন্দ সংবাদপত্রকেও জোর করে উপড়ে ফেলা যাবেনা। ভালোর সংগে প্রতিযোগিতায় মন্দরা অগ্রহণযোগ্য হবে- এটাই গণতন্ত্রের কৌশল। তবে এখন গণতন্ত্রের দোহাই দেয়া যে পুরোপুরি উলুবনে মুক্তো ছড়াবার শামিল!
 
বাংলাদেশে ফখর-মঈন উদ্দীন গংয়ের কিম্ভূতকিমাকার সরকারের সময় মাহফুজ আনামের দম্ভোক্তি আমরা ভুলিনি। ফৌজ-পছন্দ তথ্য উপদেষ্টা মঈনুল হোসেনের দিকে ভরাসভায় তর্জনী তুলে তিনি ইংরিজিতে যা বলেছিলেন, তার তর্জমা হচ্ছে: আমরাই তোমারে ঐ চেয়ারে বসিয়েছি। কাজেই আমাদের কথাতেই চলতে হবে তোমাকে।
 
প্রভাবশালী ইংরিজী পত্রিকা ডেইলি স্টার-এর সেই পরাক্রমশালী সম্পাদক মাহফুজ আনাম এখন চক্রব্যূহে পড়ে নাকাল হচ্ছেন। হাজার হাজার কোটি টাকার মানহানি মামলা দায়ের হচ্ছে তার বিরুদ্ধে দেশের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত। শাসক দল আওয়ামীলীগের ইশারায় তাদের নেতাকর্মীরা এসব মামলা করে যাচ্ছে। পুরো ব্যাপারটাই খুব পরিকল্পনা করে দাঁড় করানো।
 
ক্ষমতাসীন দলের সাংবাদিক পরিচয়ধারী প্রচারকর্মীরা একটা টিভি অনুষ্ঠানে মাহ্ফুজ আনামের মুখ থেকে খুব কায়দা করে একটি ভুল স্বীকার আদায় করে। ব্যস কেল্লা ফতে। পরদিন শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসে মাহফুজ আনামকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে গ্রেফতারের দাবি জানান। আর যায় কোথা! হিড়িক পড়ে যায় মামলা দায়েরের।
 
ফখর-মঈন যামানায় গোয়েন্দা সংস্থার সরবরাহ করা তথ্য যাচাই না করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জন্য ভুল স্বীকার করেই মাহফুজ আনাম এই বিপাকে পড়েছেন। তবে এর চেয়ে অনেক বড় ভুল ও বেশি অন্যায় মাহফুজ আনাম করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন বিএনপি এবং শহীদ জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। তার জন্য তো তাকে কখনো এমন ভুগতে হয় নি; হতে হয় নি হেনস্তার শিকার। হয়তো দুর্বিনীত লোকেরা সৌজন্য ও ভদ্রতাকে সব সময় দুর্বলতা বলেই মনে করেন এবং যারা আক্রমণ করতে পারে তাদের দিকে ঝুঁকে থাকাকেই কৌশল হিসেবে গ্রহন করেন।
 
মাহফুজ আনামের বিএনপি ও জিয়া বিদ্বেষী সাংবাদিকতা আওয়ামী লীগকে অনেক সুবিধা দিয়েছে। তা সত্বেও সামান্য বিরোধিতা ও মিত্রতামূলক মৃদু সমালোচনাও তারা সইতে নারাজ। বিরোধী দলের প্রতি সহানুভূতিশীল মিডিয়াগুলোকে শেষ করে দিয়ে এখন তারা তাই সুবিধাজনক সময়ে মাহফুজ আনামদের দিকে থাবা প্রসারিত করেছে।
 
মাহফুজ আনামরা এখন পরিপূর্ণ বশ্যতা স্বীকার করবেন কিনা তার ওপরেই নির্ভর করছে নাটকের পরবর্তী অংক কোন দিকে মোড় নেবে।