
ওষুধ প্রস্তুতকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেড বা ইডিসিএল, যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। বছরজুড়ে নানা কারণে প্রতিষ্ঠানটি পত্রিকার শিরোনাম হয়। বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোটা অঙ্কের অবৈধ আর্থিক লেনদেন থেকে শুরু করে টেন্ডার বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন এবং অর্থ লোপাটের মতো গুরুতর অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটিকে বিতর্কিত করেছে। বিভিন্ন সময়ে দুদকের অভিযানে তার প্রমাণও মিলেছে।
নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের রেশ না কাটতেই সম্প্রতি কর্মীদের তালিকা ধরে চাকরিচ্যুত করার ঘটনায় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানটি ফের আলোচনায়।
‘অতিরিক্ত জনবল’ দেখিয়ে হঠাৎ করে এপ্রিল মাসের ১০ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত এসেনশিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) বগুড়া, খুলনা, গোপালগঞ্জ ও ঢাকা অফিস থেকে ৪০০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, বগুড়া প্লান্টে ১০ এপ্রিল অফিস ছুটির পর পুলিশ ডেকে এনে ৫৪ জনকে চাকরিচ্যুতির নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। খুলনার কারখানায়ও একই দিন অফিস শেষের এক ঘণ্টা আগে নোটিশ টানিয়ে ৪৫ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি জানানো হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয়— ‘প্রয়োজনের অতিরিক্ত জনবলের কারণে শ্রম আইনের ধারা-২৬ অনুযায়ী ১০ এপ্রিল থেকে টারমিনেশন করা হলো।’ যারা প্রায় প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী কর্মী, দীর্ঘদিন ধরে তারা চাকরি করে আসছিলেন।
‘অতিরিক্ত জনবল’ দেখিয়ে হঠাৎ করে এপ্রিল মাসের ১০ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত এসেনশিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) বগুড়া, খুলনা, গোপালগঞ্জ ও ঢাকা অফিস থেকে ৪০০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, বগুড়া প্লান্টে ১০ এপ্রিল অফিস ছুটির পর পুলিশ ডেকে এনে ৫৪ জনকে চাকরিচ্যুতির নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। খুলনার কারখানায়ও একই দিন অফিস শেষের এক ঘণ্টা আগে নোটিশ টানিয়ে ৪৫ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি জানানো হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয়— ‘প্রয়োজনের অতিরিক্ত জনবলের কারণে শ্রম আইনের ধারা-২৬ অনুযায়ী ১০ এপ্রিল থেকে টারমিনেশন করা হলো।’ যারা প্রায় প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী কর্মী, দীর্ঘদিন ধরে তারা চাকরি করে আসছিলেন
এদিকে, এক বিতর্কিত ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে প্রতিষ্ঠানটির সুষ্ঠু কার্যক্রম নিয়ে। গত কয়েক মাসে ৮৫ জন নতুন শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগের পরপরই ‘অতিরিক্ত জনবল’-এর কারণ দেখিয়ে ফের কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটল। পরস্পরবিরোধী এমন পদক্ষেপ স্বাভাবিকভাবে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

চাকরিচ্যুত বগুড়া কারখানায় সাবেক সিনিয়র ক্লার্ক আমিনুল হক লোকমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে চাকরি করেছি এখানে। ১০ এপ্রিল অফিস ছুটির পর পুলিশ ডেকে এনে ৫৪ জনকে চাকরিচ্যুতির নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। আমরা এই শেষ বয়সে এসে কোথায় চাকরি পাব?’ একই কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে সততার সঙ্গে চাকরি করে এসেছি। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ায় আমাকে আওয়ামী লীগ ট্যাগ দিয়ে হয়তো চাকরিচ্যুত করা হয়।’
ইডিসিএল খুলনা কারখানার সাবেক সিনিয়র ক্লার্ক (প্রশাসন) রাকিব হাসান বলেন, ‘২০১১ থেকে শুরু, ২০১৩ সালে চাকরি স্থায়ী হয়। গত ১০ এপ্রিল অফিস ছুটির পর ৪৫ জনকে চাকরিচ্যুতির নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। এখন আমরা কী করব, কোথায় যাব?’
‘লাস্ট ইন ফার্স্ট আউট’ মানা হয়নি, ছাঁটাই নিয়ে প্রশ্ন
১৯৮৩ সালে এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) প্রতিষ্ঠা করে সরকার। ঢাকায় প্রধান কারখানা ছাড়াও খুলনা এসেনসিয়াল ল্যাটেক্স প্ল্যান্ট (কেইএলপি) হলো ইডিসিএলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন ইউনিট। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য মানসম্পন্ন পুরুষ কনডম উৎপাদন হয় এখানে। এছাড়া, বগুড়ায় ইডিসিএলের আরেকটি বৃহৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে সেফালোস্পোরিন প্রকল্পের অধীনে আধুনিক ওষুধ উৎপাদনের সুবিধা রয়েছে। গোপালগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের মধুপুরে এসেনসিয়াল ড্রাগসের প্ল্যান্ট রয়েছে।
খুলনা প্ল্যান্ট থেকে চাকরিচ্যুত সহকারী কর্মকর্তা মো. দূর্জয় রহমান সোহেল বলেন, ‘রানিং মাসে (এপ্রিল) হঠাৎ নোটিশ দিয়ে আমাদের টার্মিনেট করা হলো। এক নোটিশে ২১ জন কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়া হলো। আমরা আসলে আঞ্চলিক অফিসের রোষানলের শিকার। লোকাল অফিসের মব জাস্টিসের শিকার। আঞ্চলিক অফিস থেকেই আমাদের নাম পাঠানো হয়। মূলত এখানে হেড অফিসের কোনো দোষ নেই। এখানে লোকাল অফিসের কর্মকর্তারা যাকে ইচ্ছা তাকে বাদ দিয়েছেন। আবার যাকে ইচ্ছা রেখে দিচ্ছেন।’
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘অতিরিক্ত জনবলের জন্য যদি চাকরি যায় তাহলে যারা ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে চাকরি করছেন তাদের চাকরি যাবে, নাকি যারা নতুন জয়েন করেছেন তাদের চাকরি যাবে। পার্মানেন্ট হয় নাই এমন কর্মী আছেন ১১০০-এর ওপরে। দু-একজন ছাড়া তাদের কারও কিছু হয়নি। জুনিয়র অফিসার, সহকারী অফিসার থেকে শুরু করে অনেক স্থায়ী কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। চাকরিচ্যুত কর্মীদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা সর্বনিম্ন তিন বছর ধরে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।’

‘সাধারণত ১২ থেকে ১৬ মাসে চাকরি স্থায়ী (পার্মানেন্ট) হয়। অনেক সময় কয়েক মাস দেরি হয়। খুলনা আঞ্চলিক অফিসে এক থেকে দেড়শ এডহক ক্যাজুয়াল (পার্মানেন্ট নন যারা) কর্মী রয়েছেন। কিন্তু তাদের কিছু হয়নি। তবে, এখানে পলিটিক্যাল কোনো ইস্যু নেই। কারণ, বরখাস্তদের মধ্যে বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয় মতাদর্শের মানুষ রয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত করা অনেকেরও চাকরি গেছে। এখানে এমন হয়েছে যে, যাকে ভালো লাগে না তাকে টার্মিনেট করা হয়েছে। বিভাগীয় প্রধানের পছন্দ নয় এমন অনেককে ছাঁটাই করা হয়েছে। নিজের ইচ্ছামতো অফিস চালানোর জন্য তিনি (বিভাগীয় প্রধান) এ কাজ করেছেন।’
‘লেটার ইস্যু হয় গত মার্চ মাসের ২০ তারিখ, আর আমাদের হাতে পৌঁছায় পরের মাসের ১০ তারিখ (এপ্রিল)। আমরা জানতামও না যে, টারমিনেট হয়ে বসে আছি। একদিনেই আমাদের মেইল পাঠানো হয় এবং ওই দিনই অফিসে নোটিশ টানানো হয়। ১০ তারিখ (এপ্রিল) অফিস শেষ হওয়ার ২০ মিনিট আগে চার মাসের বেসিক বেতন ঢুকল। একই সময়ে গেইটে লিস্ট টানানো হলো আর চাকরিচ্যুতির কথা জানানো হলো। পরে অবশ্য চিঠি পাঠানো হয়।’
কোনো দোষ ছাড়াই চাকরি হারিয়ে এখন আমরা মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে— উল্লেখ করে সাবেক এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকেরই পরিবার আছে। এমন যদি হতো কোম্পানি লসে আছে তা-ও একটা কথা ছিল। কোম্পানি লাভে আছে এবং প্রতি বছর প্রফিট শেয়ারও করছে। একইসঙ্গে ওভার টাইমও দিচ্ছে। অতিরিক্ত জনবল থাকলে তো ওভারটাইম দিত না।’
একই প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ক্লার্ক (প্রশাসন) রাকিব হাসান বলেন, ‘১০ তারিখে (এপ্রিল) আমাদের ৪৫ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। আমাদের প্লান্টে আনুমানিক ৯০০-এর মতো মানুষ কর্মরত। এর মধ্যে ১০০ জন পার্মানেন্ট নন। তবুও আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়।’ ক্লার্ক (মেডিকেল) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আট বছর ধরে এখানে কর্মরত। পুরো প্রতিষ্ঠানে সাত হাজারের বেশি কর্মী রয়েছেন। এর মধ্যে এক হাজারের মতো এডহক ক্যাজুয়াল। এখানে তাদের বাদ না দিয়ে আমাদের বাদ দেওয়ার পেছনে ব্যক্তি আক্রোশ থাকতে পারে। যেহেতু আমাদের অনেককে আওয়ামী লীগ আমলে অর্থাৎ ২০১৭ সালে নিয়োগ দেওয়া হয়, সে কারণেও আক্রোশের শিকার হতে পারি। অহেতুক আমাদের বাদ দেওয়া হলো।’
চাকরিচ্যুত হওয়া সহকারী হিসাব কর্মকর্তা পদমর্যাদার আরেক কর্মকর্তা বলেন, “আমি শুধু পার্মানেন্ট নই, কনফার্মেশন পাওয়া কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানের রুলস আছে যে কাউকে বাদ দেওয়ার। তবে, সেক্ষেত্রে ‘লাস্ট ইন ফার্স্ট আউট’ পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত (যারা শেষে যোগ দিয়েছেন তাদের আগে বাদ)। এখানে ১৫ বছর, ২৫ বছর ধরে চাকরি করা লোকদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার যে গতকাল জয়েন করেছেন তার চাকরি রয়ে গেছে। মূলত আঞ্চলিক যে অফিসগুলো রয়েছে সেখান থেকে লিস্ট গেছে, তারাই স্বজনপ্রীতি করেছে। তারা মুখ দেখে দেখে বাদ দিয়েছে। কারণ, লোক কমানোর জন্য হায়ার ম্যানেজমেন্ট লিস্ট চেয়েছিল। এখানে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

আঞ্চলিক অফিসকে দোষারোপ করে তিনি আরও বলেন, ‘আঞ্চলিক অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মারাত্মক আকারে স্বজনপ্রীতি করেছেন। মনোমালিন্য বা ব্যক্তি দ্বন্দ্বের সুযোগ কাজে লাগানো হয়েছে। অন্যদিকে, এমডি-জিএমরা নাম পেয়েই সাইন করে দিয়েছেন। তাদের উচিত ছিল নিরপেক্ষ যাচাই-বাছাই করে বাদ দেওয়া। লোকাল কর্তৃপক্ষ ঠিকভাবে জাস্টিস করেনি। তাদের বিরুদ্ধে হাজারও অভিযোগ।’ তিনি চাকরি ফেরত পাওয়ার জন্য আইনিভাবে চেষ্টা করবেন বলেও জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যারা কর্মরত আছেন, তারা সবাই আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া এবং স্বৈরাচারের দোসর। তারা আওয়ামী লিগের সময় অ্যাকটিভ ছিলেন, এখন তারাই রাজত্ব করছেন।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে দেশের স্বাস্থ্যখাত ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ওষুধ প্রস্তুতকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানেও মোটা অঙ্কের অবৈধ আর্থিক লেনদেন, স্বজনপ্রীতি, প্রয়োজনের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ ওষুধের উৎপাদন বাড়েনি, উল্টো কমেছে। নিয়মের কোনো বালাই মানা হতো না। বছরের পর বছর এভাবে চলতে চলতে পঙ্গু হয়ে গেছে ইডিসিএল। যার রেশ এখনও রয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটিতে। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটিকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। যখন যে সরকার আসে তখন তাদের নেতাকর্মী ও স্বজনদের এখানে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ওরা মনিরুলের লোক, ওদের চাকরি কখনও যাবে না
সর্বশেষ চাকরিচ্যুত করার ঘটনার নেপথ্যে রাজনৈতিক কোনো কারণ নেই— জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা বলছেন, নতুন করে চাকরি বাণিজ্য করার জন্য ব্যাপক সংখ্যক কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার পরিকল্পনা এঁটেছেন এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেডের মহা-ব্যবস্থাপক মো. মনিরুল ইসলাম (প্রশাসন ও মানবসম্পদ)। খুলনা অঞ্চলে তাকে এ কাজে সহযোগিতা করছেন লোকাল অ্যাডমিন মিজানুর রহমান ও খুলনার উপ-ব্যবস্থাপক কাজী তানজীমা তাবাচ্ছুম।

তাদের অভিযোগ, মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের মদদপুষ্ট হয়ে ইডিসিএলে নিয়োগ পান মনিরুল। একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির ম্যানেজার থেকে সরাসরি খুলনা এসেনসিয়াল ল্যাটেক্স প্লান্টের (কেইএলপি) ডিজিএম পদে আসীন হন। এরপর সেখানে গড়ে তোলেন নিজের সিন্ডিকেট। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে নারীঘটিত এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বগুড়া প্লান্টে বদলি করা হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইডিসিএলের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. এহসানুল কবির জগলুলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ঢাকা হেড অফিসে পারচেজ কমিটির প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। পরে ইডিসিএলে বর্তমান পরিচালক মো. আ. সামাদ মৃধা দায়িত্বে এলে মনিরুলের কপাল খুলে যায়। সরাসরি প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের মহা-ব্যবস্থাপকের পদ জুটিয়ে নেন। এরপরই অতিরিক্ত জনবলের দোহাই দেখিয়ে চাকরিচ্যুত করার কাজে নামেন তিনি।
চাকরিচ্যুত ভুক্তভোগীরা আরও জানান, এ কাজে তাকে সরাসরি সহায়তা করছেন তারই গড়ে তোলা পুরোনো সিন্ডিকেট। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন খুলনা এসেনসিয়াল ল্যাটেক্স প্লান্টের উপ-ব্যবস্থাপক ও ইনচার্জ (হিসাব ও অর্থ) কাজী তানজীমা তাবাচ্ছুম (২৩৪৯)। তার হাত ধরেই সেখানে আধিপত্য বিস্তার করেন মনিরুল। গোপালগঞ্জ কোটায় চাকরি পাওয়া তাবাচ্ছুমকে সঙ্গী বানিয়ে অনৈতিকভাবে ওভার টাইম সুবিধা দেওয়াসহ বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। খুলনা প্ল্যান্টে তাবাচ্ছুমের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা খাদিজা আফরিন (৩৭১২), সহকারী কর্মকর্তা (প্রশাসন) শেখ মিজানুর রহমান (৪৬৭৮), কনিষ্ঠ কর্মকর্তা (নিরপেক্ষ) সুজিত কুমার মণ্ডল (৪১০১), কনিষ্ঠ কর্মকর্তা (প্রশাসন) অনন্যা ইউসুফ (২৩১৬), সোনিয়া সুলতানা (১৭৭০), মো. আশিকুজ্জামান (৪৯০৭) ও শাপলা খাতুন (নম্বর পাওয়া যায়নি)।
তাদের মধ্যে শেখ মিজানুর রহমান ছিলেন শেখ হেলালের লোকাল এপিএস। শেখ পরিবারের ক্ষমতার জোরে কেইএলপিতে নিয়োগ পান তিনি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও এই কর্মকর্তা এখনও রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
ভুক্তভোগী আরেক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, ‘মনিরুলকে খুশি রাখতে পারলে আপনার চাকরি কখনও যাবে না। এখানে তা-ই হয়েছে। কিন্তু এই সিন্ডিকেটের জন্য নিরীহ অনেক মানুষের চাকরি গেছে। যাকে এই সিন্ডিকেট হুমকি মনে করছে বা যারা তাদের অপকর্মের জন্য বাধা, সেই তালিকা করে চাকরিচ্যুত করছে মনিরুল-তাবাচ্ছুম গং। অনেক সাহসী লোক আছেন, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন; তাদেরকেও তালিকা করে বাদ দেওয়া হচ্ছে। চাকরি বাঁচানোর ভয়ে কেউ আর তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন না।’
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতন হলেও মনিরুল-তাবাচ্ছুমরা দোসর হয়েও এখনও কীভাবে বহাল তবিয়তে রয়েছেন এবং আরও দায়িত্বশীল পদে প্রমোশন পাচ্ছেন— সেই প্রশ্ন রাখেন এ কর্মকর্তা। বলেন, ‘শুধুমাত্র নিয়োগ বাণিজ্য করে টাকা কামানোর জন্য তালিকা করে চাকরিচ্যুত করছেন মনিরুল গং। ১১০০-এর ওপর এডহক ক্যাজুয়াল (অস্থায়ী কর্মী) থাকলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেটআপ (পার্মানেন্ট) হওয়া কর্মীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত জনবল থাকলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ওভারটাইম করতে হতো না। মূলত নতুন করে চাকরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের পরিকল্পনা করছেন তারা।’

অভিযোগ অস্বীকার, আইন মেনেই সবকিছু হচ্ছে : মনিরুল ইসলাম
উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেডের মহা-ব্যবস্থাপক মো. মনিরুল ইসলাম (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘নিয়োগ, বদলি, টারমিনেশন— এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। যেটা সার্ভিস রুলস এবং শ্রম আইন বিধিমালা অনুযায়ী হয়ে থাকে। সাময়িক বা ক্যাজুয়াল বা স্থায়ী; সবার ক্ষেত্রেই বরখাস্ত, ডিসচার্জ, অপসারণ, টারমিনেশন প্রযোজ্য। অবশ্যই সেটা আইন মেনে।’
‘গত ১০ এপ্রিল আমাদের ২১২ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এটা কোম্পানি আইন মেনেই করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে কাজের তুলনায় মানুষ বেশি হলে এমনটি হয়। যাদের পারফরমেন্স খারাপ, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অংশ নিয়ে পরিবেশ নষ্ট করছেন এবং যাদের কাজে ভালো আউটপুট নেই, তাদেরই বাদ দেওয়া হচ্ছে। আঞ্চলিক অফিসের প্রধানরাই তালিকা করে পাঠিয়েছেন। তাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী বাদ দেওয়া হয়েছে। গত ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত ৪০০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।'
খুলনা প্ল্যান্টে নারীসংশ্লিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি হেড অব প্ল্যান্ট ছিলাম। আমার কাছে সবাই আসা-যাওয়া করতেন। এখানে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
বদলিকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খুলনা প্ল্যান্ট আমার হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বগুড়া প্ল্যান্টে দুই পক্ষের ঝামেলা হয়েছিল। সেখান থেকে দুই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। আমাকে খুলনা থেকে বদলি করে সেই প্ল্যান্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২২ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি সেখানে ছিলাম। এর আগে ২০১৬ সালে আমি খুলনা প্ল্যান্টে ডিজিএম (হেড অব প্ল্যান্ট) হিসেবে জয়েন করি।’
আওয়ামী লীগ আমলের সুবিধাবাদী কর্মকর্তা আপনি— উত্থাপিত এ অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেন, ‘পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করি এবং চাকরিও পেয়ে যায়। আমার বাড়ি মাগুরায়। এ কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখরের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে অনেকে কথা বলেন। কারণ, তার বাড়িও মাগুরায়।’
চাকরি বাণিজ্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই’। ‘সিন্ডিকেট’ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোনো সিন্ডিকেটের বিষয়েও অবগত নই। বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে ডিপার্টমেন্ট বা প্ল্যান্টহেডদের প্রস্তাবনা এবং কর্মী বা কর্মকর্তাদের রেকর্ড যাচাই-বাছাই করেই করা হয়।’

বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই প্রসঙ্গে জানতে এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আ. সামাদ মৃধার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
অন্যায় হয়েছে মনে করলে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারেন : সচিব
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি (এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লি.) সরাসরি আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। তারা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। তাদের কিছু নিয়ম-কানুন আছে। কিন্তু ঢালাওভাবেও কাউকে চাকরিচ্যুত করা যায় না।’
নতুন করে নিয়োগ বাণিজ্য করার জন্য এমন ছাঁটাই কি না— জবাবে সচিব বলেন, ‘নতুন নিয়োগের বিষয়ে আমরা দেখব। আমরা বলছি, এক্ষেত্রে আমাদের অনুমতি নিয়ে করতে হবে। সেখানে (এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লি.) যে প্র্যাকটিসটা ছিল, যাকে ইচ্ছা তাকে নিয়োগ দেওয়া; সেটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে যদি কেউ আমাদেরকে বলে সেক্ষেত্রে হয়তো আমরা দেখতে পারি। কেউ যদি মনে করেন তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, তাহলে উনি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারেন।’
‘অতিরিক্ত জনবল’ নাকি অন্যকিছু, তদন্ত করে দেখা দরকার : ইফতেখারুজ্জামান
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, “যদি আইনসম্মতভাবে তাদের বাদ দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে নোটিশ দেওয়ার কথা। এখানে চাকরিচ্যুত করার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটা যথাযথ মানা হয়েছে কি না, সেটিও দেখার বিষয়। পুরো বিষয়টি যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচিত হবে খতিয়ে দেখা। কারণ, এত বড় সংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের পেছনের কারণ কি শুধুই ‘অতিরিক্ত জনবল’ নাকি অন্য কিছু, তা তদন্ত করে দেখা দরকার।”
তিনি বলেন, ‘স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নিয়োগ ও চাকরিচ্যুতির বিষয়টি সাংঘর্ষিক বিধায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের দায়িত্ব হচ্ছে বিষয়টি অনুসন্ধান করা। চাকরিচ্যুত করার সময় যদি কোনো আইন বা বিধিমালা লঙ্ঘন হয়ে থাকে, তবে তার পেছনে কী কারণ রয়েছে, সেটি বের করতে হবে। যারা লঙ্ঘন করেছেন তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে এবং যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যেহেতু এত বড় সংখ্যক জনবলকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তারা আদালতে যেতে পারেন। আইনের আশ্রয় নিতে পারেন, সেই সুযোগটা রয়েছে।’

‘যেহেতু ইডিসিএল একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট আইন বা চাকরির যে বিধিমালা রয়েছে সেটা অবশ্যই মানতে হবে। যদি বিধিমালা লঙ্ঘন হয়ে থাকে তাহলে এখানে যারা আইন মান্য করছেন না; এখন সেটা নিয়োগ বাণিজ্যের জন্যই হোক আর অন্য যেকোনো কারণেই হোক বা কোনো ষড়যন্ত্রই থাকুক, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। জবাবদিহি করার সুযোগ আছে। জবাবদিহি করার যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, তাদের উচিত অভিযোগ বা অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া। সেক্ষেত্রে তারা যদি ব্যর্থ হন তাহলে প্রশ্ন উঠবে— নজরদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না।’
ক্ষতিগ্রস্তরা সিভিল কোর্টে ‘ডিক্লারেশন স্যুট’ ফাইল করতে পারেন : আইনজীবী
ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান রায়হান বলেন, ‘প্রথমত, প্রতিষ্ঠানটি স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় সেখানে খুব সম্ভবত শ্রম আইন অ্যাপ্লিকেবল হবে না। এটা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে যাবে। সরকারি চাকরি বিধিমালা এখানে অ্যাপ্লাই হবে। তারপরও শ্রম আইনের ২৬ ধারায় বলা আছে— মালিকপক্ষ যদি কোনো শ্রমিককে বাদ দিতে চায়, তাহলে সেক্ষেত্রে ন্যূনতম ৬০ দিনের বেসিক বেতন দিতে হবে বা অন্যান্য ফ্যাসিলিটি যদি থাকে তা দিতে হবে। যদি এগুলো মানা হয় সেক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের খুব একটা দায় থাকে না।’
‘যদি প্রতিষ্ঠান মনে করে কাউকে প্রয়োজন নেই সেক্ষেত্রে চাকরির চুক্তিপত্র অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ বা কয়েক মাসের বেতন দিয়ে তাকে বাদ দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আইনগত খুব একটা জটিলতা নেই। এটা পুরোটা নির্ভর করবে চুক্তিপত্রের ওপর।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানে যদি অতিরিক্ত জনবল হয় সেক্ষেত্রে যারা এডহক (অস্থায়ী) তাদের বাদ দিতে হবে। যারা স্থায়ী তাদেরকে ফর্মালিটিজ মেইনটেইন করে নিয়ম অনুযায়ী বাদ দিতে হবে। আইন অনুযায়ী স্থায়ী কর্মীদের আগে বাদ দেওয়া যায় না। যদিও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে স্থায়ী কর্মীদের বাদ দেওয়া একটু কঠিন। বেসরকারির ক্ষেত্রে নিয়ম একটু ভিন্ন।’
চাকরিচ্যুতদের উদ্দেশ্যে এ আইনজীবী বলেন, ‘যদি কোনো স্থায়ী কর্মীর মনে হয় তাকে নিয়ম না মেনে বাদ দেওয়া হয়েছে, তবে তিনি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল বা সিভিল কোর্টে ডিক্লারেশন স্যুট ফাইল করতে পারেন। মানে চাকরিচ্যুত অবৈধ দাবি মর্মে ঘোষণা করা হোক— এমন আবেদন জানিয়ে মামলা করতে পারবেন। দেখা যায় অনেক সময় আইনে একটা বিষয় আছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের যে নিয়োগ বিধিমালা সেখানে কিছু নিয়ম যুক্ত হয় বা কিছু বাতিল হয়। কিন্তু সেটা মূল আইনের সঙ্গে খুব বেশি সাংঘর্ষিক হতে পারবে না। সেটা সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে বেশি হতে পারে, তবে কম হতে পারবে না।’
এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেডে স্থায়ী কর্মীদের চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে চাকরিচ্যুতির ক্ষেত্রে আইন পরিপূর্ণভাবে মানা হয়নি। যদি শ্রমিক অতিরিক্ত হওয়ার কারণে বাদ দিতে হয় তবে যারা অস্থায়ী আছেন তাদের আগে বাদ দিতে হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা এহসানুল কবির। দুদকে ৪৭৭ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে। শুরুতে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেও গত ১০ বছর টানা এই পদে ছিলেন তিনি। সরকারি চাকরির পাশাপাশি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদকের পদে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে গত ২ অক্টোবর ইস্তফা দেন তিনি। তার আমলে রাজনৈতিক স্বার্থে ইডিসিএলকে ব্যবহারের প্রবণতা প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছে।