
আজ ২৪ এপ্রিল, ঢাকার সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১২ বছর আজ। সেদিন কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার গৃহবধূ রেবেকা বেগম। স্বামী মোস্তাফিজুর রহমানকে খাইয়ে নিজে না খেয়েই পরিবারের ৭ সদস্য মিলে রানা প্লাজার দ্বিতীয় তলায় কাজ করছিলেন।
পাশের লাইনে রেবেকার মা তখন ডাকছিলেন খাওয়ার জন্য।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাইহাট চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী রেবেকা বেগম (২৮)। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে দুই পা হারিয়ে চির পঙ্গুত্ব জীবন বরণ করতে হয় রেবেকা বেগমকে। প্রায় ১১ মাস হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন রেবেকা।
সেদিনের স্মৃতি বর্ণনা করে তিনি বলেন, সকাল ৯টার দিকে বিকট শব্দে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ঘটনার পর জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান ফিরলে দেখি পায়ের ওপর সিমেন্টের বিম চাপা পড়েছে।
এখন কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটা জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছি। তারপরও দুই সন্তানকে মানুষ করার জন্য দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে চাই। মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহা (১০) ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে ও ছেলে মাদানী আন্নুর (৬) নার্সারি শ্রেণিতে পড়ে।
তিনি বলেন, আমার বাম পায়ের হাড় বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাক্তার বাড়তি হাড় কাটতে অপারেশন করতে বলেছে। টাকার অভাবে অপারেশন করতে পারছি না। আমি আরো অনেকদিন বাঁচতে চাই। আমার দুই সন্তানকে মানুষ করার জন্য।
রানা প্লাজা ধসের ভয়াল স্মৃতি এখনো বহন করে চলেছেন উল্লেখ করে রেবেকা জানান, স্বামী মোস্তাফিজুর রহমানের সেবা-ভালোবাসা ও সহযোগিতায় হাসিমুখে দিন কাটছে তার। দুই হাতের ওপর ভর করেই ঘর-গৃহস্থালির কাজ করাসহ সন্তানদের দেখভাল করছেন রেবেকা। সেদিনের ধসে মা চানবানুসহ দাদি, ফুফুকে হারিয়েছেন রেবেকা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের ওই দুর্ঘটনায় ১ হাজার ১৩৫ শ্রমিক নিহত হন। সেই দুঃখজনক ঘটনার ১২ বছর পূর্ণ হলো আজ বৃহস্পতিবার। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের অনেকে এখনো আতঙ্কগ্রস্ত। বেঁচে থাকার তাগিদে কেউ নতুন পথ খুঁজে নিয়েছেন। জীবনযুদ্ধে লড়াই চালিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা।