
অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে বলে দেশীয় ও ভারতীয় মিডিয়ার হাতে গোনা কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর কাল্পনিক প্রচারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। নিহতের চার দিন পর নিহতের চন্দ্র রায়ের ছেলে উচ্চ শিক্ষিত ছেলে স্বপন রায় করা মামলায় ফুটে উঠেছে। মামলার এজাহারে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া যুবকদের সাথে তার পিতার সম্পর্ক খুবই ভাল ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভাল সম্পর্কের কারণেই আমার পিতা আর্থিক সমস্যার কারনে ১ নম্বর আসামির কাছে মাসিক লাভের বিনিময়ে পঁচিশ হাজার টাকা কর্জ নিয়েছিল।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই যুবকরা (৪জন) বাড়িতে বাবাকে ডেকে নিয়ে যায়। জোর পূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। লিখিত এজাহার মতে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর সুদের টাকার জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারের কোথাও পিটিয়ে মারার কথা এমনকি জখম বা আঘাত সংক্রান্ত হাসপাতাল চিকিৎসকের সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়নি। পোস্টমর্টেম রির্পোট পাওয়া না গেলেও মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব না হলেও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে দেয়া বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য এবং এজাহার মতে ভবেশকে জোরপূর্বক অপহরণ বা পিটিয়ে হত্যার রিপোর্টগুলো স্বার্থসংশ্লিষ্ট এবং চক্রান্তমূলক এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ভবেশকে হিন্দু নেতা বলে উল্লেখ করা হলেও সে সনাতন ধর্মাবলম্বী মুল সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাথে যুক্ত নয় বলে জেলা কমিটির সভাপতি সুনিল চক্রবর্তী নিশ্চিত করেছেন। তবে বাৎসরিক পূজা উদযাপন কমিটির বিরল উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি পদে তার নাম রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার সময় বিরল উপজেলার ৪ নম্বর শহরগ্রাম ইউনিয়নের বাসুদেবপুরের নিজ বাড়ি থেকে ভবেশের পূর্ব পরিচিত চার যুবক এসে ডেকে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর রাত পৌনে আটটার দিকে যুবকদের একজন টেলিফোনে অসুস্থতার কথা জানায় জানালে স্বপন তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। সেই অবস্থা জানিয়ে তাকে ভ্যান যোগে বাড়ির কাছাকাছি ফুলবাড়ী বাজারে নিয়ে আসে যুবকরাই। সেখানে একজন পল্লী চিকিৎসক কৃঞ্চ পাল তার হার্ট পর্যবেক্ষণ করে বলে তার প্রেসার শূণ্য তাই তাকে হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়। তার ছেলে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসে তাকে ৯টা ১৮ মিনিটে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রাত ৯টা ৩৮ মিনিটে তাকে পথেই মৃত্যু হয়েছে মর্মে ছাড় পত্র দেয়া হয়। লক্ষনীয় বিষয় যে হাসপাতালে ভর্তির সময় অপরহরণ করে পিটিয়ে হত্যা সংক্রান্ত কোনো তথ্য না দেয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তির সময় পুলিশ কেস হিসাবে সিল দেয়া হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মন্তব্য অনুযায়ী পোস্টমর্টেম ছাড়াই পরিবারের সদস্যরা সৎকার করার উদ্যোগ নিলেও প্রতিবেশীদের পরামর্শে পোস্টমর্টেম করানোর স্বিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
১৮ এপ্রিল স্থানীয় দু’জন সংবাদকর্মী অতি উৎসাহী হয়ে পরিবারের অভিযোগ না থাকলে তাকে অপহরণ করে হত্যার কাল্পনিক প্রচার প্রচারণা চালাতে থাকে। এদের মধ্যে ডেইলি ষ্টার পত্রিকার প্রতিনিধি সহ ৩ জন গণমাধ্যম কর্মী হুবুহু একই সংবাদ প্রচার করে। ভবেশের স্ত্রী সান্তনা রানীর বক্তব্যসহ অন্যান্য ভিডিও ফুটেজ পাচার করা হয় ভারতীয় গণমাধ্যমে। সান্তনা রানীর বক্তবে সরাসরি জোরপূর্বক অপহরণ বা পিটিয়ে হত্যার কথা উল্লেখ করা না হলেও ভারতীয় দোসর স্থানীয় গনমাধ্যম কর্মীদের সহায়তায় তাদের মনগড়া বক্তব্য দিয়ে প্রচার করতে থাকে। এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তারা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়ক সম্প্রিতি বিনষ্টের চক্রান্তে মেতে উঠে। কিন্তু স্থানীয় কতিপয় সচেতন ব্যক্তি এবং দিবালোকের মত সত্য ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের কোনো সুযোগ না থাকায় তার পরিবার থেকেও সেরকম উচ্চবাক্য করা হয়নি। প্রথম থেকেই নিহত ভবেশের স্ত্রী ও সন্তান সুস্থ অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর মৃত্যুর বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না। যার প্রতিফলন ঘটেছে ২১ এপ্রিল বিকেলে দায়ের করা মামলায়। বিরল থানায় দায়েরকৃত মামলা নম্বর ২০ ধারা ৩০২ তাং ২১-০৪-২০২৫। মামলার শেষাংশে বাদী অর্থাৎ ভবেশের ছেলে সুমন চন্দ্র উল্লেখ করেছে আসামিরা তার বাবাকে সুকৌশলে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে আশাবাদী। ভবেশের মৃত্যুর কারণ জানতে এখন তার পরিবার, স্থানীয় জনগণ থেকে সকলেই উম্মুখ হয়ে আছে।