Image description
আজ নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ১৫ টি সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। যদিও সুপারিশপত্রটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়নি, পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে এর কিছু অংশ জনসমক্ষে এসেছে। প্রধাণ উপদেষ্টা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জানিয়েছেন, তিনি এ সুপারিশগুলো লিফলেট ও বই আকারে প্রকাশ ও বিতরণের ব্যবস্থা করবেন।
 
বাংলাদেশে নারীরা বিভিন্নভাবে অবহেলার শিকার হচ্ছেন— এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রশ্ন হলো, এই অবহেলার জন্য মুসলিম পারিবারিক আইনকেই কেন বারবার দায়ী করা হচ্ছে? এর পেছনে কি কোনো সুদূরপ্রসারী মতাদর্শ লুকিয়ে আছে? সংস্কার কমিশনের সদস্যরা আসলে কোন শ্রেণি বা চিন্তাধারার প্রতিনিধিত্ব করছেন? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— এই সুপারিশগুলোর সঙ্গে দেশের সাধারণ নারীদের কতটা সমর্থন রয়েছে? কত শতাংশ নারী এই সুপারিশের পক্ষে মত দিয়েছেন?
 
কমিশনের এক সুপারিশে বলা হয়েছে, সংসদের ৩০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। প্রশ্ন হলো, অতীতে সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্যরা জাতির কী উপকারে এসেছেন? বর্তমানে নারী উপদেষ্টারা কতটুকু নারীর সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছেন? আইন-শৃঙ্খলা জোরদার না করে কেবল নারী আসন বাড়িয়ে দেশের নারীরা আসলে কী লাভবান হবেন?
রাজনৈতিক দলগুলোতে ৩৩% নারী অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে। বাস্তবে দেখা যায়, এ ধরনের কোটা কেবলমাত্র সংখ্যার খাতায় পূরণ করা হয়, প্রকৃত ক্ষমতায়ন হয় না। যদি নারীর সামাজিক নিরাপত্তা ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হয়, তবে কোটা সংরক্ষণের প্রয়োজনই বা কেন?
 
এই সংস্কার কমিশনের সবচেয়ে আশঙ্কাজনক প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে মুসলিম পারিবারিক আইনের সংস্কার। এ ধরনের পরিবর্তন পারিবারিক কাঠামোকে গভীরভাবে নাড়া দিতে পারে। যদি নারীদের সম্পত্তিতে পুরুষদের সমান অধিকার দেওয়া হয়, তবে একজন পুরুষ কেন নারীর মোহরানা, ভরণপোষণ বা পারিবারিক দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হবেন? কেন তিনি বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালন করবেন? এতে সমাজের প্রচলিত পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ভেঙে পড়বে, এবং ফলস্বরূপ পরিবারব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে উঠবে।
 
বাংলাদেশ এখনো CEDAW সনদের ধারা ২ ও ১৬ (১) (গ) সংরক্ষিত রেখেছে, যেখানে বিবাহ, তালাকসহ পারিবারিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের পূর্ণ সমতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই কমিশন সেই সংরক্ষণ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। আল্লাহর আইনের পরিপন্থী কোনো আইনকে সমর্থন করা একজন ঈমানদার মুসলমানের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। যেখানে দেশের অধিকাংশ নারী ধর্মপরায়ণ, সেখানে কাদের প্রতিনিধি হয়ে এই সুপারিশগুলো করা হচ্ছে?
 
প্রশ্ন হলো— বর্তমানে নারীরা যেসব অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, কেবল আইন করে সমতা প্রতিষ্ঠা করলেই কি তারা সেই অধিকার আদায় করতে পারবেন? সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না করে যারা এই ধরনের সুপারিশ করছেন, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ থাকাই স্বাভাবিক।
 
পরিবারব্যবস্থা সমাজের মূল ভিত্তি। একে ধ্বংস করে সমতা প্রতিষ্ঠা করা মানেই আগামী প্রজন্মকে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া। তাই এখনই মূলধারার নারীদের সচেতন হয়ে এ বিষয়ে সরব হতে হবে। মুষ্টিমেয় কিছু নারী যেন গোটা নারীসমাজের পক্ষ হয়ে কথা বলার সুযোগ না পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে এই সুপারিশগুলো এক সময় বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে এবং তাতে সমাজ ও পারিবারিক কাঠামোর জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।
~আফসানা আক্তার