
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে আলাপগুলো আমরা প্রতিনিয়ত করি তার বেশিরভাগই আবেগতাড়িত। এর কস্ট বেনিফিট, সম্ভাব্য কনসিকুয়েন্স এনালাইসিস করারও প্রয়োজন রয়েছে বৈকি।
আওয়ামী লীগ যত না একটি রাজনৈতিক দল, তার চেয়েও বেশি একটি অপরাধী সংগঠন। এটি সংঘবদ্ধ অপরাধীদের আস্তানা। সুযোগ পেলেই এরা নাশকতা করছে। তবে সহজে চিহ্নিত করা যাচ্ছে যেহেতু তাদের এখন একটি পরিচয় আছে। দলের বিভিন্ন পদ পদবীর নেতা কর্মী হিসেবে তারা এসব নাশকতা করছে। যখন নিষিদ্ধ করা হবে তখন আপনি এদের চিহ্নিত করতে পারবেন না। আর তখন নাশকতার পরিমাণও অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক খেলোয়াড়রা আওয়ামী লীগের সাথে মিলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সুযোগ পেতে পারে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র তখন মরিয়া হয়ে উঠতে পারে। এটাই যে ঘটবে সেটা নাও হতে পারে। আমি সম্ভাবনার কথা বলছি। আওয়ামী লীগ কর্মীরা দলের প্রতি খুব ডেইডিকেইটেড। এরা এটাকে ধর্মের চেয়েও বেশি মনে করে।
সরকার চাইলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে পারে বিভিন্ন উপায়ে।
এক. সরকার কর্তৃক নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা। এটা সরকার করলে পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘের রোষানলে পড়তে পারে বলে সরকার এটা সম্ভবত করবে না। এছাড়া ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের যে একটা গুড ইমেইজ আছে সারা বিশ্বে সেটা তিনি নষ্ট করবেন বলে মনে হয় না। ডঃ ইউনূস বলেছেনও যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা সরকারের নেই।
দুই. নির্বাচন কমিশন কর্তৃক দলের নিবন্ধন ও প্রতীক বাতিল করা। সরকারি নির্বাহী আদেশ ছাড়া নির্বাচন কমিশন এই ঝুঁকি নেওয়ার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ।
তিন. গণভোট নেওয়া। এটা হতে পারে একটি ভালো বিকল্প। তবে অনেক খরচসাপেক্ষ এবং দুই তৃতীয়াংশ ভোট নিষিদ্ধের পক্ষে হতে হবে। একটু ঝুঁকি আছে।
চার. আইনী প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ করা। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো। এটা করা সম্ভব হলে সবকূল রক্ষা হবে। ৬ মাসের দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ায় এটা করা সম্ভব। প্রচলিত আইসিটি আইনে একটি ধারা সংযোজন করেই এটা করা সম্ভব। এটাই সবচেয়ে ভালো বিকল্প।
বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কোনো দলকে নিষিদ্ধ করলে তার কিছু খারাপ প্রতিক্রিয়া থাকে। আন্তর্জাতিক বিশ্বে একটি নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হয় যা বিনিয়োগ ও অর্থনীতিতে হুমকি সৃষ্টি করে। নিষিদ্ধের আলাপ শেষ করছি।
এবার অন্য বিকল্প নিয়ে ভাবা যাক। রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের কথা বলা হচ্ছে। রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যদি নিম্নোক্ত শর্তসমূহ মেনে গঠনের অনুমতি দেওয়া হয় তবে আম জনতা মেনে নিতে পারে।
এক. ২০১৪ এর ভোটারবিহীন নির্বাচন, ২০১৮ এর লাইলাতুল ইলেকশন এবং ২০২৪ এর আমি ডামির নির্বাচনে নির্বাচিত সকল আওয়ামী ও আওয়ামী দোসর এমপিকে এই নতুন আওয়ামী লীগ হতে বাদ দিতে হবে।
দুই. শেখ পরিবার ও শেখ পরিবারের সাথে কানেক্টেড কাউকে এই প্রক্রিয়ায় রাখা যাবে না।
তিন. নবগঠিত আওয়ামী লীগ কর্তৃক জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দিতে হবে, শহীদদের স্বীকৃতি দিতে হবে। খুনি হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে মেনে নিতে হবে। আওয়ামী লীগ কর্তৃক ১৬ বছর ধরে যে গুম, খুন, গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে সেগুলো স্বীকার করে নিতে হবে।
চার. নবগঠিত দলটি মুক্তিযুদ্ধকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবে না।
এবার আলোচনা করা যেতে পারে নবগঠিত আওয়ামী লীগকে আপনি কিভাবে মোকাবিলা করবেন। এরা নির্বাচনে আসলে আওয়ামী লীগের ২০-২৫% ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কৌশল হতে পারে যে যে আসনে আওয়ামী লীগ (পড়ুন রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ) শক্তিশালী সে আসনগুলোতে বিএনপি জামায়াতের একক প্রার্থী থাকতে পারে বা একটি দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান সমঝোতা হতে পারে।
তখন নবগঠিত আওয়ামী লীগকে ১৫-২০ টি আসনের মধ্যে বেঁধে রাখা সম্ভব হবে।
আপনারা যারা মনে করেন যে জামায়াতের আমির এবং বেগম জিয়ার সাথে লন্ডনে স্রেফ সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে তারা ভুল। তাঁদের মাঝে রাজনৈতিক আলাপও হয়েছে, এসব সমঝোতার বিষয়েও আলাপ হয়েছে।