Image description
 

জুলাই অভ্যুথানে হাসিনা সরকারের পতনের পর অনেক ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। যার ফলে অনেক সাইটে কাজ হচ্ছে না, ধস নেমেছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। আগের মাসগুলোর তুলনায় মার্চ মাসে কাজের গতি কিছুটা বেড়েছে। তবু বছর শেষে মূল এডিপির চেয়ে লাখ কোটি টাকা এবং সংশোধিত এডিপির চেয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা খরচ কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

 
এদিকে শেষ সময়ে বড় খরচের লক্ষ্যমাত্রা অনিয়ম-দুর্নীতিকে উসকে দেয় বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিমত।

 

গতকাল জুলাই-মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। তাতে দেখা যায়, ৯ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৬.৬৫ শতাংশ। এর চেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য সংস্থাটির ওয়েবসাইটে নেই।

 
এদিকে ৯ মাসে ৮২ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা অর্থছাড় হয়েছে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন। গত অর্থবছরে এক লাখ সাত হাজার ৬১২ কোটি টাকা ছাড় হয়েছিল এই সময়। গত মার্চ মাসে অর্থছাড় হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। যেখানে আগের অর্থবছরের মার্চ মাসে ছাড় হয়েছিল ২২ হাজার ৯ কোটি টাকা।
 

 

আইএমইডির তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের আর মাত্র তিন মাস বাকি আছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে উন্নয়ন খাতে দুই লাখ ২৬ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যা মূল এডিপিতে ছিল দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপি অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে আরো এক লাখ ৪৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। এত টাকা খরচ করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, যেখানে ৯ মাসে মাত্র ৮২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

 
সেখানে বাকি তিন মাসে আর সর্বোচ্চ ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হবে। বাকি টাকা পড়েই থাকবে। এদিকে শেষ সময়ে বেশি কাজ করতে গিয়ে কাজে অনিয়মের শঙ্কাও দেখা যাবে বলে মত তাঁদের।

 

এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক সচিব মামুন আল রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উন্নয়নকাজ অনেক স্থানে শেষ হলেও বিলগুলো দেওয়া হয়নি এখনো, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে এসব বিল যাচাই-বাছাই করে দিচ্ছে। যে কারণে ব্যয় কম হচ্ছে। তবে কোনো বছরই বাজেটের পুরো অর্থ ব্যয় হয় না।’ তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘শেষ সময়ে একসঙ্গে তাড়াহুড়া করে টাকা ব্যয় করতে গিয়ে অপচয়, দুর্নীতি ও অর্থ ব্যয়ের গুণগতমান নষ্ট হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করে উন্নয়নকাজের বিল যাচাই-বাছাই করে দেওয়া ভালো হবে।’

ধীরগতির বিষয়ে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এডিপি বাস্তবায়ন হার কম হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ঠিকমতো অর্থছাড় না হওয়া। কারণ বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সভায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদা না থাকায় চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। এডিপির আকার বেশি দেখাতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার এডিপি বাস্তবায়ন মূল এডিপির তুলনায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকা কম হবে।

আইএমইডি সূত্র জানায়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপির তুলনায়, সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) আকার কমেছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপি থেকে বরাদ্দ কমেছিল ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে কমেছিল ১৫ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার সর্বোচ্চ এডিপি কাটছাঁট হয়েছে। এদিকে যে পরিমাণ সংশোধিত এডিপিতে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে, আগে কখনো এত টাকা রাখা হয়নি। আগের বছর ১৮ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাখা হয়েছিল মাত্র তিন হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাস্তবায়ন গতি কম থাকায় সরকারি তহবিলের চাহিদাও অনেক কমেছে। সাধারণত অন্যান্য অর্থবছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সরকারি তহবিল থেকে চাহিদা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এডিপিতে যে পরিমাণ সিলিং বেঁধে দেওয়া হয়েছে,  চাহিদা তার চেয়ে কম রয়েছে। তবে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে চলতি অর্থবছরে চাহিদার চেয়ে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বৈদেশিক  ঋণ ও অনুদান থেকে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা চাহিদা দিয়েছিল। কিন্তু সরকার বৈদেশিক অর্থায়ন ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়ায় বরাদ্দ বাড়িয়ে ৮১ হাজার কোটি টাকার সিলিং দেওয়া হয়।