
নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। কবে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন—এই প্রশ্নের এখনো স্পষ্ট কোনো উত্তর নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে ঐকমত্য নেই। একাংশের মধ্যে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিও যেমন রয়েছে, তেমনি অন্য অংশের নেতারা এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরো সময় নিতে বলছেন।
দোদুল্যমান অবস্থায়ও রয়েছে কিছু দল। নতুন ও ছোট দলগুলো দেরিতে নির্বাচনের পক্ষে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও এ বিষয়ে বিভক্ত। এক পক্ষ বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজই হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন তা করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে সরকারের দায়িত্ব হস্তান্তর করা।
অন্য পক্ষে বলা হচ্ছে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁদের দোসরদের বিচার সম্পন্ন হতে হবে। রাষ্ট্রের সংস্কারও সম্পন্ন করতে হবে। আবার কারো মত, গণহত্যার বিচার ও সংস্কারকে নির্বাচনের বিপরীতে দাঁড় করানোর কোনো সুযোগ নেই। রাজনৈতিক দলগুলো যে যার অবস্থান থেকে সুবিধামতো প্রস্তাব রাখছে।
এই অবস্থার অবসান অন্তর্বর্তী সরকারকেই করতে হবে। বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলোর বাইরে নতুন এবং ছোট দলগুলো মনে করছে দ্রুত নির্বাচন তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে না। আর বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো মনে করছে তাদের ক্ষতি এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্যই নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিলম্ব করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আগামী ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের কথা বলেছেন। গত বুধবার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ সময়সীমার কথা বলেন। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন কোনোভাবেই জুনের পরে যাবে না। যে যা-ই বলুক না কেন, এটা পুরো জাতির প্রতি প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে হচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ডিসেম্বরে সম্ভব হলে ডিসেম্বরে, জানুয়ারিতে সম্ভব হলে জানুয়ারিতেই নির্বাচন হবে বলে বিএনপিকে বোঝানো হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের ডেটলাইন না দেওয়ায় তাঁরা একেবারেই সন্তুষ্ট নন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রমজান, তারপর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং পরে বর্ষাকালের কথা স্মরণ করিয়ে ডিসেম্বরের পর নির্বাচন হওয়া কঠিন বলে জানিয়েছে বিএনপি।
রাজনৈতিক দলগুলো যা বলছে : দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায় সমমনা ইসলামী দলগুলো। এই দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও নেজামে ইসলাম পার্টি। এই চারটি দল সম্মিলিতভাবে গত বুধবার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে এক বৈঠক করে এই চাহিদা নির্ধারণ করে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গত বুধবার বগুড়ায় পার্টির জেলা প্রতিনিধিসভায় বলেন, নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তি অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের এক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দূরত্বও তৈরি হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের যেহেতু নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকার কথা নয়, তাই নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত রাখারও কোনো অবকাশ নেই।
তিনি আরো বলেন, গণহত্যার বিচার ও সংস্কারকে নির্বাচনের বিপরীতে দাঁড় করানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ অপরাধের বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের কাছে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার রয়েছে। এ জন্য গণতান্ত্রিক সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
গত বুধবার জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছিলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বর্ষা, বিভিন্ন ধরনের ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। তাই আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন চায় জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। এগুলো হলো—সংস্কার, ফ্যাসিস্টদের বিচার এবং সঠিক নির্বাচন পদ্ধতি। নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর সময়সীমা কঠিন নয়। এই সময়ের আগে বা পরে নির্বাচন হতে পারে, যদি শর্তগুলো পূরণ হয়।
গত বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসন অনেক জায়গায় বিএনপির পক্ষে কাজ করছে, এ ধরনের প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। এনসিপি জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি নির্বাচন নিয়ে যেভাবে রাজনৈতিক চাপ তৈরি করা হচ্ছে তাতে সংস্কার বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক চাপে সংস্কারকে অসম্পন্ন রেখে নির্বাচন আয়োজন করলে শত শত শহীদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি করা হবে। অভ্যুত্থানে আহতরা এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।
নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবে না : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ আগামী জুলাই মাসে ঘোষণা করা হবে বলে গত বুধবার সাংবাদিকদের জানান নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। কিন্তু এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন আরেক নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জুলাইয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নয়, আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে একটি কর্মপরিকল্পনা করতে পারি। এ ধরনের একটি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে, এটি আরো সুনির্দিষ্ট করা হতে পারে। তবে আমরা ডিসেম্বরকে নির্বাচনের সময় ধরেই প্রস্তুতিমূলক কাজ করে যাচ্ছি।’
নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজে এখন কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই তফসিল ঘোষণার আগে যাঁদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাঁদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে। এরই মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিদ্যমান ভোটার তালিকা আইনে সামান্য সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেব। আমরা আশা করছি, আগামী জুনেই এসব তরুণ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।’ নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে। কয়েকটি দল এরই মধ্যে আবেদন করেছে। এ ছাড়া বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের দল এনসিপি গতকাল দল নিবন্ধনের জন্য সময় আরো ৯০ দিন বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। এ বিষয়ে আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
জাতীয় সংসদের আসন এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান আইনে একটি করণিক ভুল রয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। সেটি সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছে। বিদ্যমান যে সীমানা তা নিয়ে খুব বেশি আপত্তি আছে বলে মনে হয় না। এ কাজটিও আমরা দ্রুত সম্পন্ন করতে পারব বলে আশা করছি।’
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন জাতীয় সংসদের আসনসংখ্যা ৪০০-তে উন্নীত করে ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি ভোটের প্রস্তাব রেখেছে। এ ক্ষেত্রে তো আসনগুলোর সীমানা ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে। এ প্রশ্নে আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, এটি এখনো প্রস্তাব। আইনে পরিণত হয়নি। আইনে পরিণত হলে এ কাজটিও দ্রুত সম্পন্ন করতে সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। তবে আগামী নির্বাচনে এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন হবে কি না সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসা দরকার।
বিশিষ্টজনরা যা বলছেন : সাবেক সচিব ও রাজনীতি বিশ্লেষক আবু আলম শহীদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার এই সরকারকে করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করতে হলে করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ বেশি হলে তা সরকারের দায়িত্বে যাঁরা আছেন তাঁদের দায়িত্ব পালনের জন্য সুবিধা হয়। তবে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচিত সরকারের কাছে সরকারের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে। নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিক সময় নির্ধারণ করতে হবে। নির্বাচন ডিসেম্বর, জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারিতেও হতে পারে। তাতে কোনো অসুবিধা আছে বলে মনে হয় না। তবে এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐকমত্যে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো যে যার অবস্থান থেকে সুবিধামতো প্রস্তাব রাখছে। ছোট দলগুলো মনে করছে, দ্রুত নির্বাচন তাদের জন্য সুবিধাজনক হবে না। আর বড় দলগুলো মনে করছে তাদের ক্ষতি করার জন্যই নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিলম্ব করা হচ্ছে। এই অবস্থার অবসান অন্তর্বর্তী সরকারকেই করতে হবে। নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে বিভ্রান্তি কাম্য নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শহীদুজ্জামান মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের যে সময়সীমার কথা বলেছে, তাতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি নেই। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও তাঁদের দোসরদের বিচার সম্পন্ন হতে হবে। আমার মনে হয়, দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর কোনো চাপ নেই।’
রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) সভাপতি কর্নেল (অব.) আব্দুল হক বলেন, ‘আমি নিজে জুলাই বিপ্লবে অংশ নিয়েছি। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছি। আমি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্বাস করি এবং মনে করি যে উনার মতো যোগ্য নেতা বিশ্বে বিরল। আমরা তাঁকে আমাদের ভেঙে পড়া দেশটাকে মেরামত করার দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যতটা সময়ের কথা বলেছেন, তার অতিরিক্ত এক দিনও সময় নেবেন না। আমরা এ বিষয়টি তাঁর ওপরই ছেড়ে দিতে পারি। তিনি সম্মানিত মানুষ। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ায় তাঁর সম্মান বেড়েছে এমনটাও নয়। তাঁর ক্ষমতার লোভ নেই।’
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার পুত্র ও রাজনীতি বিশ্লেষক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। আমার মনে হচ্ছে, এই সরকার নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এই দলের নেতাদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিতে নির্বাচন বিলম্বিত করছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশেরও সংকট বাড়বে। জনগণ দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে।’