
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মশাল মিছিল করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৭টার দিকে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন তারা। এ সময় ভিসির পদত্যাগের দাবিতে নানা স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাতে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দুর্বার বাংলা’ ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিল থেকে শিক্ষার্থীরা—‘দফা এক, দাবি এক, কুয়েট ভিসির পদত্যাগ’; ‘কুয়েট ভিসির গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’; ‘স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’; ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেবো রক্ত’; ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়; ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’; ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’; ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত, মানি না, মানবো না’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। এতে ২০তম ব্যাজের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম, ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শেখ জাহিদ ও গালিব রাহাত বক্তব্য দেন। লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ‘আমাদের সংগ্রাম আমাদের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নয়, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। আমাদের ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারীরা মানববন্ধন করলেন না। আমাদের নামে মিথ্যা মামলা হলেও তারা মানববন্ধন করলেন না। এখন আমাদের বিরুদ্ধে তারা কীভাবে গেলেন? যেখানে কর্মচারী কর্মকর্তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ সেখানে বিএনপির কমিটিতে থাকা ব্যক্তি এখনও কীভাবে চাকরিতে বহাল? আমাদের সংগ্রাম স্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে। আমাদের বিশ্বাস, পুরো দেশ জুলাই-আগস্টের পর আর কোনও স্বৈরাচারকে ঠাঁই দেবে না। আর স্বৈরাচার দমানোর জন্য আমরা প্রয়োজনে আবার জুলাই নামাবো।’
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বেলা পৌনে ২টার দিকে কুয়েট স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা দেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন ঘোষণাপত্রটি পড়ে শোনান। ঘোষণাপত্রটি পাঠ করার পর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলের তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করার ঘোষণা দেন। এরপর বেলা আড়াইটা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে ফেলেন। এ সময় ১০০ থেকে ১৫০ শিক্ষার্থী হলগুলোতে অবস্থান নেন।
এর আগের দিন সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। তবে মঙ্গলবার কুয়েটের দাফতরিক কর্যক্রম শুরু হয়েছে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে আন্দোলন আবারও দানা বাঁধতে থাকে। গত সোমবার রাতেও শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করেন। সর্বশেষ উপাচার্যের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন এবং তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।