
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক ও ছাত্রীকে জড়িয়ে কণ্ঠসদৃশ কথোপকথনের কয়েকটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে ফাঁস হওয়া তিনটি অডিও ক্লিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. তানজিউল ইসলাম জীবনের কণ্ঠসদৃশ একজন পুরুষকে ওই বিভাগের এক ছাত্রীকে পরীক্ষার ফল পরিবর্তন, নম্বর বাড়ানো এবং তা নিয়ে কীভাবে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে—তা শিখিয়ে দিতে শোনা যায়।
এসব অডিও প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয় মহলে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক, উঠেছে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও। শুধু তাই নয়, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মতো একটা জায়গায় থেকে এমন বিতর্ক প্রশাসনের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ফাঁস হওয়া অডিওতে, শিক্ষক ছাত্রীকে বলছেন, ‘আমি হিসেব পাতি করেই করেছি। তোমার বয়স অনেক কম। তুমি প্রথমে চাইছিলা “স্যার আমাকে ফাস্ট করে দেন।” আমি দিতে পারতাম। কোনো দেইনি। আজকে কি জবাবটা দিতাম? ছাত্রী বলতেছেন তখন আলাদা কথা। শিক্ষক আরো বলেন, একদম সাইলেন্ট। ছাত্রী বলেন, আমি একদম চুপচাপ আছি। আমার কাছ থেকে শুনবেন না স্যার আপনার সম্পর্কে খারাপ কথা বলেছি বা অন্য কাউকে বলিছি। কারন আপনার সাথে আমার একদিনের জন্য হলেও একটা ভালো সমপর্ক ছিল।তাই কেউ জিজ্ঞাসা করলে আমি ডিপলমেটিক এনসার দিবো।’
আরেকটি অডিও ক্লিপে শোনা যায়, ‘শিক্ষক বারবার বলতেছেন তার পর বলো কি কথা ছিলো? কি করবা বলো সেটা? বারবার এগুলো বলাও ঠিক না। তখন ওই ছাত্রী জবাবে বলেন, স্যার মাঝখানে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম পরে একটু প্রব্লেম হয়ে গিয়েছিলো। যা কথা ছিলো সেটাই হবে।’
এর আগে সাদিয়া সুভা নামে ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা হয়, ‘শিক্ষক বলতে আমরা বুঝি গাইড, ফিলোসফার, ছাত্রদের মাঝে মনুষ্যত্ব সৃষ্টি করা সর্বোপরি মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির পর এমন একজন শিক্ষকে পেলাম যেখানে শিক্ষক মানে নারীলোভী, অর্থলোভী এক নোংরা মানুষ জনাব তানজিউ ইসলাম জীবন। অসংখ্য ছাত্রী তার দ্বারা মানসিক, শারিরীক নির্যাতনের শিকার। ভবিষ্যতে আর কোন ছাত্রীকে যেন নিগৃহীত হতে না হয়, তাই কিছু লিখলাম। এইশিক্ষক যেদিন থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পা রেখেছে তখন থেকে নিরীহ, সহজ-সরল, সাধারণ মেয়েদের টার্গেট করে। শারীরিক ভাবে কীভাবে হেনস্তা করা যায়। সে এখন পর্যন্ত অনেক মেয়েকে নম্বর দেয়ার নামে,প্রথম বানিয়ে দেওয়ার নামে,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বানিয়ে দেওয়ার নামে কুপ্রস্তাব দেয়। আর এই ভাবে প্রত্যেক ব্যাচে তার টার্গেট এ যে মেয়ে গুলো থাকে তাদের শারীরিক নির্যাতন করেই আসছে শুরু থেকে এখন পযন্ত। আর তার এই নোংরামির বিষয় গুলো জনসম্মুখে নিয়ে আসতে ভয় পায় রানিং শিক্ষার্থীরা।কারণ তিনি ছাত্রত্ব ও নম্বর কমিয়ে দেয়ার মতো মানসিক চাপ দিতেই থাকে। শিক্ষার্থী হিসেবে নৈতিকতার জায়গা থেকে কথা বলার এখন সময় এসেছে বলে আমি মনে করি।’
ওই পোস্টের কমেন্টে সাজিয়া করিম নামে এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন, ‘ঘাড়ত্যাড়া টিচার মানা যায় কিন্তু চরিত্রহীন মানা যায়না। এই ব্যাটা যদি টিচার থেকে যায় তাহলে তো এরকম ঘটনা আরো ঘটবে।’ জাহিরুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন, ‘রক্ষকই যদি হয় ভক্ষক তাহলে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
এ ঘটনায় শিক্ষক ড. তানজিউল ইসলাম জীবন রংপুর তাজহাট থানায় একটি সধারণ ডাইরি করেন। ডাইরিতে উল্লেখ করেন, আমাকে নিয়ে ফেসবুকে সাদিয়া সুভা আইডি থেকে কুরুচিপূর্ণ মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। আমার নামে মিথ্যা তথ্য, অপপ্রচারসহ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে। চেষ্টা করেও অপপ্রচার কারীর পরিচয় শনাক্ত করতে ব্যর্থ হই। সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত না থাকায় বিষয়টি আপাতত সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করে রাখা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. তানজিউল ইসলাম জীবন বলেন, ‘অডিও আমি এখনো শুনিনি। ছাত্ররা বলল, আমার নামে যে অডিও ছেড়েছে সেখানে একপক্ষ স্পষ্ট কথা শোনা যায়, আর আমার কণ্ঠ নাকি শোনা যায় না। আমি তো বলবো এটা ষড়যন্ত্র। আমার কণ্ঠ হয়ত এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী বলেন, ‘যিনি অডিওটি ভাইরাল করেছেন, তার কাছে আমাদের আহবান থাকবে অফিশিয়াল প্রসিডিউর মেইনটেইন করে প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে পরবর্তীতে আমরা একটি কমিটি গঠন করব। সে কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’