
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে সংবাদ সংগ্রহের সময় এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি মুছে ফেলার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ সুপারের বডিগার্ডের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে জেলা পুলিশের দাবি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাংবাদিক পরিচয় জানা না থাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
সূত্রে জানা গেছে, ওইদিন সকালে কুড়িগ্রামের চিলমারী ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর শহরের মোড়ে ঈদে ঘুরতে যাওয়া মা-মেয়েকে উত্যক্তের অভিযোগে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মাইকিংয়ের মাধ্যমে সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। পরে কুড়িগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর একটি টিম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাতেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঘটনাস্থলে যান কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন চিলমারী সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সাদ্দাম। তিনি জানান, ছবি ও ভিডিও ধারণ করার সময় পুলিশ সুপার তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং মোবাইল কেড়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। পরে এসপির সঙ্গে থাকা এক বডিগার্ড তার ফোন থেকে ভিডিও ও ছবি মুছে ফেলেন।
সাংবাদিক জাহাঙ্গীর বলেন, "আমি পরিচয় দেয়ার পরও পুলিশ সুপার আরও রেগে যান এবং বলেন— ‘মিডিয়া ছুটাই দেব।’ এরপর মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করেন তার সঙ্গী পুলিশ সদস্য।"
ঘটনাটির পর কুড়িগ্রামের সাংবাদিক সমাজ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান টিউটর বলেন, “একজন সরকারি কর্মকর্তা এভাবে সাংবাদিকের সঙ্গে আচরণ করতে পারেন না। তাকে প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।”
এ বিষয়ে চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম জানান, ঘটনার সময় পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, তবে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার বিষয়ে তার জানা নেই।
এদিকে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, “ঘটনার সময় অন্ধকারে একজন তরুণ ভিডিও করছিল। তিনি সাংবাদিক পরিচয় দেননি বা তার কোনো পরিচয়পত্রও ছিল না। ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় তা মুছে ফেলার কথা বলা হয়েছিল। মিডিয়ার বিরুদ্ধে কিছু বলা হয়নি।”
পরবর্তীতে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে একটি লিখিত বিবৃতি সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, অস্ত্র উদ্ধারের একটি অভিযানের সময় ভিডিও ধারণ করছিলেন এক অজ্ঞাত তরুণ। বিষয়টি অভিযানের গোপনীয়তা নষ্ট করতে পারে ভেবে ভিডিও ডিলিট করতে বলা হয়। পরে জানা যায়, তিনি একজন সাংবাদিক। এরপর তাকে মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “পুলিশ ও মিডিয়া পরস্পরের সহযোগী। মিডিয়ার প্রতি কোনো রকম অসম্মানসূচক বক্তব্য প্রদান করা হয়নি। কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে, যা সত্য নয়।”