
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে অস্তিত্বহীন প্রকল্পের নামে অর্থ বরাদ্দের অভিযোগ উঠেছে। নামসর্বস্ব সমিতি নামে দেওয়া হয়েছে লাখ লাখ টাকার বরাদ্দ।
জানা গেছে, গত ২৫ মার্চ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য এককালীন আর্থিক অনুদান ও সহায়তা বিষয়টি জানানো হয়। এতে ১৮৫ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিপরীতে তিন কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বরাদ্দ পাওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই নামই ভুয়া কিংবা নামসর্বস্ব। তালিকায় থাকা একজনের নাম ত্রিনা চাকমা।
অভিযোগ রয়েছে, নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের নাম ভাঙিয়ে ১২টি প্রকল্পের অনুকূলে ২৫ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ পান তিনি। ত্রিনা চাকমা ফ্যাস্টিট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও নারী উদ্যোক্তাদের বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও তার নামে সরকারি অর্থ বরাদ্দে হতবাক হয়েছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া রক্তদান ফাউন্ডেশনের নামে ৫০ হাজার টাকা, হাসিখুশি শিল্পগোষ্ঠীর নামে ৪০ হাজার টাকা এবং হিলমুন কালচালার গ্রুপের নামে ৩০ হাজার টাকাসহ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তালিকার শুরুতেই নাম থাকলেও বাস্তবে এসব সংগঠনের কোনো অস্তিৃত্ব নেই। সংগঠন তিনটির প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম মাসুদের নামে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেতার বাবার প্রতিষ্ঠানেও লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে তালিকার ২৭ নম্বরে থাকা খেজুরবাগান বিত্তহীন সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি নুরুচ্ছাফারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি সাড়া দেননি। তালিকায় ৫৪ নম্বরে আছে খাগড়াছড়ি সদরের কলেজগেট এলাকার পাহাড়ি বাঙালি সম্প্রীতি সমবায় সমিতির অনুকূলে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য বাঁধ সংস্কারসহ মৎস্য চাষ। সমিতির সভাপতি নিশি মনি চাকমা প্রকল্পের অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
এছাড়াও অনেক প্রকল্পের বিষয়ে জানতে তালিকা দেওয়া মুঠোফোন নাম্বারে কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ আবার সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদে পরপর তিন দফায় অর্থ-খাদ্যশস্য বরাদ্দে বৈষম্য, স্বজনপ্রীতির কারণে পাহাড়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তিন দফার বরাদ্দকৃত তালিকা ঘেঁটে ও তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, চলতি বছরের ২৫ মার্চ আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য খাগড়াছড়ির জেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২য় পর্যায়ে ১৮৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে তিন কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার মধ্যে ৯৬ জন চাকমা সম্প্রদায়ের অনুকূলে ২ কোটি ৩২ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ৪০ জন মারমার বিপরীতে ২১ লাখ ৭০ হাজার, ৩৬ জন মুসলিম বাঙালির মধ্যে ৪৭ লাখ ১০ হাজার টাকা, হিন্দু সম্প্রদায়ের ৬ জনের অনুকূলে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ৭ জন ত্রিপুরার বিপরীতে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সম্প্রতি বরাদ্দ নিয়ে বৈষম্য ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ ও বিক্ষুব্ধ মারমা জনগোষ্ঠীর ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রকল্পের অধিকাংশ ভুয়া প্রতিষ্ঠান। এছাড়া একই ব্যক্তি ও পরিবারকে একাধিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনের খাগড়াছড়ি শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদ উল্লাহ জানান, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলে বাঙালি মাত্র ৩৮টি প্রকল্প পেয়েছে। এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা আবারও আন্দোলনে নামব।
মনগড়া, বৈষম্যমূলক ও ভুয়া প্রকল্পের বিষয়ে জানতে একে একে কল করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার একান্ত সচিব, সচিব ও উপসচিবদের নাম্বারে। তাদের মধ্যে উপদেষ্টার একান্ত সচিব খন্দকার মুশফিকুর রহমানের মুঠোফোনে কল রিসিভি করে এ বিষয়ে সচিবের সঙ্গে কথা বলতে বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অভিযোগ উঠেছে জেলা পরিষদ সদস্য ও উপদেষ্টার নিকট আত্মীয় বঙ্গমিত্র চাকমা এসব বরাদ্দে বড় প্রভাব বিস্তার করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে বঙ্গমিত্রের মুঠোফোনে কল ও হোয়াটস অ্যাপে খুদে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।