
এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়া ঠেকাতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন । উচ্চকক্ষের ধরন নিয়ে চিন্তা ভিন্ন হলেও মূল প্রস্তাবে একমত বিএনপি , জামায়াত , এনসিপিসহ অধিকাংশ দল । কিন্তু দ্বিমত প্রকাশ করেছে এবি পার্টি । দলটি মনে করে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উপযোগী রাজনৈতিক পরিবেশ বাংলাদেশে হয়নি । সেই সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে দলটি । জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে গত ১৭ মার্চ মতামত জমা দেয় এবি পার্টি । দলটি সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৭০ টি প্রস্তাবের মধ্যে ৪২ টিতে একমত হয়েছে , ১৬ টি প্রস্তাবে দ্বিমত এবং ১২ টিতে আংশিকভাবে একমত প্রকাশ করেছে । সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদের ইংরেজি পরিভাষা ‘ প্লুরালিজম ' ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে এবি পার্টি ।
এবি পার্টির মতামত নিয়ে আজ সোমবার দলটির সঙ্গে সংলাপে বসবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন । এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু করেছে কমিশন ।
প্রথম ধাপে ঈদের আগে এলডিপি , খেলাফত মজলিস , লেবার পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন । ঈদের ছুটির পর আজ বেলা ৩ টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে এবি পার্টির সঙ্গে আলোচনায় বসবেন কমিশনের সদস্যরা । আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু আজকের পত্রিকাকে বলেন , “ আমরা যেসব বিষয়ে দ্বিমত বা ভিন্নমত পোষণ করেছি , তা নিয়ে আলোচনা হবে । জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ৬ মার্চ ৩৮ টি রাজনৈতিক দলের কাছে সংবিধান , নির্বাচনী ব্যবস্থা , দুর্নীতি দমন , বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার - সংক্রান্ত ১৬৬ টি সুপারিশ প্রস্তাব আকারে পাঠায় । বিএনপি , জামায়াত , এনসিপি , এবি পার্টিসহ ২৮ টি দল এসব প্রস্তাবের ওপর মতামত জমা দিয়েছে । ১৬৬ টি প্রস্তাবের মধ্যে ১০৮ টিতে একমত এবি পার্টি । এ ছাড়া ৩২ টি একমত নয় দলটি এবং ২৬ টি আংশিকভাবে একমত ।
এবি পার্টি এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে বলে কমিশনে জানিয়েছে । বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিবেচনা করে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উপযোগী পরিবেশ বাংলাদেশে এখনো প্রস্তুত হয়নি । বলে মনে করে দলটি । একই সঙ্গে আইনসভার মেয়াদ পাঁচ বছরের পক্ষে তারা । এবি পার্টি মনে করে সংসদের উচ্চকক্ষ থাকলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রেসার গ্রুপ হিসেবে পরিচিত সুশীল সমাজসহ নানা শ্রেণিকে উচ্চকক্ষের সদস্য করা হবে । উচ্চকক্ষের সদস্য হওয়ার জন্য পেশাজীবীরা দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে জড়িয়ে যাবে । এ ছাড়া উচ্চকক্ষ পুনর্বাসন কেন্দ্র হওয়ার
আশঙ্কাও করছে দলটি । এবি পার্টি ১০০ টি নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিরোধিতা করে সংখ্যানুপাতিক হারে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমন্বয়ের পক্ষে । ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের পক্ষে প্রস্তাব করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন । বিষয়টিতে দ্বিমত পোষণ করে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে দলটি । নির্বাচন সংস্কার কমিশনের ২৭ টির মধ্যে ১২ টিতে একমত , ৮ টিতে দ্বিমত এবং ৭ টিতে আংশিকভাবে একমত পোষণ করেছে এবি পার্টি । বিচার বিভাগের ২৩ টির মধ্যে ২১ টি একমত এবং একটি করে একমত নয় ও আংশিকভাবে দ্বিমত । তাদের প্রস্তাবে আছে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতার পরামর্শে ।