Image description

দেশে গণপিটুনি, ধর্ষণ ও অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। সংগঠনটি তথ্য অনুযায়ী- চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে গণপিটুনির ঘটনা ছিল ১৮টি। মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯টিতে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৫৭টি। মার্চে এ ঘটনা ঘটে ১৩২টি। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ধর্ষণ ও গণপিটুনি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

আজ সোমবার এমএসএফ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মার্চ মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ কথা জানায় মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে গণপিটুনির ঘটনা ছিল ১৮টি। মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯টিতে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৫৭টি। মার্চে এ ঘটনা ঘটে ১৩২টি। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ধর্ষণ ও গণপিটুনি বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। সেই সঙ্গে বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যাও। ফেব্রুয়ারিতে ৪৬টি অজ্ঞতানামা লাশ উদ্ধার হয়েছিল। মার্চে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ৪৯টি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকার অভাব, বিচারহীনতা, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের বেপরোয়া করে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেতিবাচক দায়িত্ববোধ, ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে অপারগতার ফলে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যে হারে বেড়ে চলেছে, তা জাতীয় জীবনে অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। একই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও শিথিলতার সুযোগে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতির মতো অপরাধের সংখ্যাও উদ্বেগজনকভাবে  বেড়েছে। স্পষ্টতই এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীলতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্ব সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা যেমন বেড়েই চলেছে, তেমন বেড়েছে দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়কার আন্দোলন বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। এ মাসে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার কমলেও তা এখনো উদ্বেগজনক। প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ধর্ষণ বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা বেড়েছে। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও হামলা, তথা সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ অব্যাহত রয়েছে।’

এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫২টি ঘটনায় হতাহত হয়েছেন ৪৫৯ জন। তাদের মধ্যে ১২ জন নিহত এবং ৪৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩ জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে ৬ জন বিএনপির, ৩ জন আওয়ামী লীগের, ১ জন পথচারী, ১ জন বৃদ্ধ ও ১ জন প্রবাসী রয়েছেন।

রাজনৈতিক কর্মী না হয়েও বিএনপির দলীয় সংঘর্ষের মধ্যে পরে তিনজন নিহত হন। সহিংসতার ৫২টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বের ৩৯টি, বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ৬টি, বিএনপি-জামাত সংঘর্ষের ৩টি, বিএনপি-জামাত-ইসলামী ঐক্যজোটের সংঘর্ষের একটি, বিএনপি-এলডিপি সংঘর্ষের একটি বিএনপি-জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংঘর্ষের একটি, জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্তর্দ্বন্দ্বের একটি ঘটনা ঘটেছে। এর পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ৪টি ঘটনা ঘটেছে। এ সকল ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২ জন এবং আহত হয়েছেন ৬ জন। এ ছাড়াও এ মাসে দুজন রাজনৈতিক নেতার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।