Image description

অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন মেয়র হিসেবে কবে শপথ নিচ্ছেন? তিনি কী আসলেই শপথ নিতে পারবেন? এ ছাড়া ওই করপোরেশনের মেয়াদ কী এখনো আছে? থাকলে আর কত দিন আছে?- এমন অনেক প্রশ্ন রাজনীতি এবং আদালত অঙ্গনে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। 

২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচনের ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে আদালত রায় দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এসব প্রশ্ন চলে আসছে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম এ রায় দেন। তবে আইনজীবীরা বলছেন, শপথ নিতে হলে আদালতের রায়ের আলোকে তাকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে গেজেট প্রকাশ হতে হবে। ওই গেজেটের ভিত্তিতেই শপথ নিতে পারবেন তিনি।

এদিকে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ অনুযায়ী হিসাব করে দেখা যায়, ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত কাউন্সিলের ৫ বছর মেয়াদ সম্পন্ন হচ্ছে আগামী ১৫ মে। অর্থাৎ শপথ নিলে আগামী ১৫ মে তারিখের মধ্যেই নিতে হবে তাকে।

শপথকে ঘিরে নানা প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে, ইশরাকের আইনজীবী মো. তাহেরুল ইসলাম (তৌহিদ) গতকাল শনিবার দৈনিক খবরের কাগজকে বলেন, আদালত তো উনাকে মেয়র ঘোষণা করেছেনই। এখন শপথের বিষয়ে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবেন। তা ছাড়া পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘আদালতের রায় তো এখনো আমরা হাতে পাইনি। রায় পেলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।’

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সিটি করপোরেশনের ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই হিসেবে অনেকেই মনে করছেন ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারিতেই তো ওই করপোরেশনের পাঁচ বছর মেয়াদ সম্পন্ন হয়ে গেছে।

যদিও ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হিসেবে শপথ নেন। এই তারিখ ধরে হিসাব করে আবার কেউ মনে করছেন ২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ওই করপোরেশনের পাঁচ বছর মেয়াদ সম্পন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু তাতেও তো ইশরাক হোসেনের আর শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই। যদিও স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯-তে ‘সিটি করপোরেশনের মেয়াদ’ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘করপোরেশনের মেয়াদ উহা গঠিত হইবার পর উহার প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হইবার তারিখ হইতে পাঁচ বছর হইবে।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান বলেন, ‘করপোরেশন বলতে এখানে নির্বাচিত মেয়রের নেতৃত্বে কাউন্সিলরদেরকে বোঝানো হয়েছে আইনে।’

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ওই নির্বাচনের পর ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ ফজলে নূর তাপস শপথ নিলেও মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০২০ সালের ১৬ মে। সেই হিসাবে ২০২৫ সালের ১৫ মে অর্থাৎ শপথ নিতে হলে ইশরাককে আগামী ১৫ মে তারিখের মধ্যেই শপথ নিতে হবে।

উল্লেখ্য গত বৃহস্পতিবার তাকে মেয়র ঘোষণার পর আদালত থেকে বের হয়ে তার আইনজীবীরা বলেন, ২০২০ সালে নির্বাচনে প্রার্থী ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা করা হয়, ইভিএম মেশিনে ভোট জালিয়াতি করা হয়, নির্বাচনে ভোটারদের ভোটগ্রহণে বাধা দেওয়া হয়, নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি করা হয়। এসব জালিয়াতির পরও ইসি শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করে। কমিশনের এ সংক্রান্ত গেজেট চ্যালেঞ্জ করে ওই বছর ২০২০ সালের ৩ মার্চ ইশরাক হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। আদালত পূর্ণাঙ্গ শুনানি নিয়ে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করেছেন।

ইশরাক মামলায় উল্লেখ করেন, ‘ওই নির্বাচনে তিনি ছিলেন একজন মেয়র প্রার্থী। তার নির্বাচনি কর্মী, তাদের এজেন্টদের মারধর করা হয়। এ নিয়ে তখন গণমাধ্যমে প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও সেগুলো আমলে নেওয়া হয়নি। বরং কমিশন নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন। নির্বাচনের দিন তার এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়া হয়।’

মামলায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি শেখ ফজলে নূর তাপস নির্বাচনি আইন লঙ্ঘন করে রঙিন পোস্টার লাগান। এ বিষয়ে ইশরাক নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও দিয়েছিলেন। এরপর ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি ইশরাক হোসেনের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা। তার নির্বাচনি প্রচারে ব্যবহৃত মাইক ভাঙচুর করা হয়।

মামলায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলসহ বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়।