Image description
কলকাতায় ইফতার পার্টির নামে সক্রিয় কোর গ্রুপ। পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা প্রস্তুত করছে অ্যাকশন প্ল্যান। 

খোলস ছেড়ে ধীরে ধীরে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা। বিশেষ করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া এই দলটির সাবেক মন্ত্রী, সংসদ-সদস্যসহ শীর্ষ নেতাদের অনেকে ইফতার পার্টির নামে নয়া ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছেন। মূলত বাংলাদেশের ভেতরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে উৎখাত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। আওয়ামী ঘনিষ্ঠ দেশি-বিদেশি চক্র এ এজেন্ডা বাস্তবায়নে এখন পুরোমাত্রায় সক্রিয়। এজন্য কলকাতা, আগরতলা, মেঘালয় ও দিল্লির মাটিকে নির্বিঘ্নে ব্যবহার করার সুযোগও পাচ্ছেন পলাতক আওয়ামী নেতারা। ষড়যন্ত্র সফল করতে কোর গ্রুপ তৈরি করে ঘনঘন বৈঠকে বসছেন তারা। মধ্য রমজান থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচ দফা বৈঠকে মিলিত হওয়ার খবর মিলেছে।

এদিকে ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারাও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হটাতে একাট্টা। কীভাবে বিদেশে বসে দেশের মধ্যে নানারকম অঘটন ঘটিয়ে সাধারণ মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা যায়, সে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। সবশেষ ষড়যন্ত্রের উত্তপ্ত কড়াইয়ে ঘি ঢালার অবস্থা তৈরি হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বর্তমান চীন সফরকে কেন্দ্র করে। এ সফরে সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ ভারত। কেননা, ঢাকা যদি এ মুহূর্তে ভূরাজনৈতিক স্বার্থসুরক্ষার প্রশ্নে চীনের কবজায় চলে যায়, তাহলে ড. ইউনূস সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বেশ বেগ পেতে হবে। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বৃহস্পতিবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা কোনোরকম নাশকতার আশঙ্কা করছি না। তবে আগের চেয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা আরও বাড়ানো হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে। কেউ কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে।’ জানা যায়, রোববার কলকাতার রাজারহাট এলাকায় অবস্থিত নিউটাউন প্লাজায় একটি ইফতার পার্টির আয়োজন করেন সেখানে পালিয়ে থাকা পতিত আওয়ামী লীগের নেতারা। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, ভোলা-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ, ময়মনসিংহ-১০ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, টাঙ্গাইল-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরসহ শতাধিক নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিও সস্ত্রীক ছিলেন এই ইফতার পার্টিতে।

সূত্র জানায়, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ছিলেন এই ইফতার পার্টির আয়োজক। পরদিন সোমবার একই স্থানে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের পলাতক শতাধিক নেতা ইফতার পার্টির নামে মিলিত হন। বাগেরহাট-৪ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ছিলেন এই ইফতার পার্টির আয়োজক। প্রধান অতিথি হিসাবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও এখানে উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, দুটি ইফতার পার্টিতেই আসাদুজ্জামান খান কামাল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে তার সরকারকে যে কোনো মূল্যে উৎখাতে যার যার অবস্থান থেকে জোরালো ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘অস্ত্র এবং অর্থ-এসবের কোনো অভাব হবে না। যেভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেভাবে আপনারা আপনাদের কাজটা ঠিকঠাক করুন।’ সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে যত দ্রুত উৎখাত করা যাবে, আওয়ামী লীগের ফিরে আসাটাও তত দ্রুত সহজ হবে।

জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নেতাদের মধ্যে অন্যতম আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। তিনি এর আগে ১০ জানুয়ারি কলকাতার নিউ টাউন এলাকার ‘কলকাতা নিউ টাউন অ্যাক্সিস মহলে’ একটি বৈঠকের আয়োজন করেন। ওই বৈঠকেও শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে পরিকল্পনা মোতাবেক অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী আন্দোলনে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন।

সূত্র জানায়, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম একসময় ছিলেন পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার। এর বাইরে তিনি শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার ফান্ড ম্যানেজার হিসাবেও পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসহ মাদক ব্যবসা, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঘুস-চাঁদাবাজির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করা পলাতক এই আওয়ামী লীগ নেতার ঢাকায় রয়েছে বড় পরিসরের মদের ব্যবসা। যিনি নিজ এলাকা ফেনীতে গড়ে তোলেন অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। একইভাবে মাদক ব্যবসা, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঘুস-চাঁদাবাজির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ। অভিযোগ রয়েছে, ড. ইউনূস সরকারকে উৎখাত করতে পতিত এবং পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ এখন ব্যয় করা হচ্ছে।

জানা যায়, নিউ টাউন প্লাজায় ইফতার শেষে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ নেতারা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এরপর রাতের খাবার খেয়ে যে যার ঠিকানায় ফিরে যান। বৈঠকের মূল বিষয়বস্তু ছিল অন্তর্বর্তী সরকার উৎখাতের রণকৌশল ঠিক করা। বৈঠকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন শীর্ষ নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে যুগান্তরকে জানান, তারা নিজেদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করতেই মূলত একসঙ্গে বসেছিলেন। ওই নেতা আরও বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারকে যে কোনো মূল্যে উৎখাত করতে যা যা করা প্রয়োজন, তাই করা হবে। এক্ষেত্রে ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহায়তা কিংবা সমর্থন আছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের ওপর পুরোপুরি নজর রাখছে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তারা আমাদের এখানে (ভারত) নির্বিঘ্নে-নিশ্চিন্তে থাকতে দিচ্ছে। এর অর্থ-তারা আমাদের পাশেই আছে।

ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-আন্দোলনের মুখে গত বছর ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গী ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানাও। শেখ হাসিনা দিল্লিতে ভারত সরকারের আশ্রয়ে থাকলেও শেখ রেহানা এ মুহূর্তে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগের এবং দলটির বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা, সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ-সদস্যরা পালিয়ে আছেন ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এছাড়া স্বয়ং শেখ হাসিনা ভারতে বসে প্রতিদিনই টেলিফোনসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। এ সংক্রান্ত একাধিক অডিও কল রেকর্ড প্রায় ভাইরাল হয়।

সূত্র জানায়, কলকাতার বাইরে বুধবার যুক্তরাজ্যের সেন্ট্রাল লন্ডনে অবস্থিত একটি মিলনায়তনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ইফতার পার্টি এবং বিজয় দিবসের আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীল সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেটের সাবেক সংসদ-সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবসহ দেড় শতাধিক নেতা এতে অংশ নেন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করতে ওই বৈঠক থেকে আবদুর রহমান দলের নেতাকর্মীদের সর্বশক্তি নিয়োগ করার আহ্বান জানান।

জানা যায়, একই দিন অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়, বেলজিয়াম, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক জায়গায় ইফতার পার্টির পাশাপাশি বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনাসভার আয়োজন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। বেলজিয়ামের আলোচনাসভায় সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ছিলেন প্রধান অতিথি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, হঠাৎ গদিহারা হয়ে কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা প্রথমদিকে কিছুদিন চুপচাপ ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তারা বেশ সরব এবং সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে কলকাতা, আগরতলা, দিল্লি, মেঘালয়সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা কিছুদিন ধরে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকের মূল এজেন্ডা অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ করা। দেশকে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি আসন্ন ঈদ ও বৈশাখকে ঘিরেও চলছে সরকার উৎখাতের নানামুখী ষড়যন্ত্র। সূত্রগুলো বলছে, ঈদের পর দেশে নাশকতামূলক বড় ঘটনার যেসব গোয়েন্দা আভাস ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে, এর নেপথ্যে রয়েছে আওয়ামী এই কোর গ্রুপসহ দেশি-বিদেশি একাধিক চক্র।

জানা যায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে আগে থেকেই হাজার হাজার বৈধ ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। এসব অস্ত্র নাশকতা পরিকল্পনায় ব্যবহার করতে ছক কষা হচ্ছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে জনমনে ভীতি ও আতঙ্ক তৈরি করতেও পরিকল্পনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র প্রতিবেদককে জানায়, ‘আপনাদের মনে রাখতে হবে, যেসব পরিকল্পনা বাইরে ফাঁস হচ্ছে, বাস্তবে এগুলো কখনো প্রয়োগ করা হবে না। এ ধরনের পরিকল্পনা যদি ফাঁস হয়ে যায়, সেটি তো আর ‘ষড়যন্ত্র’ থাকে না। ফলে সরকার উৎখাতের অংশ হিসাবে যা ঘটবে এবং যা যা করা হবে, তা কেউ আগাম জানতে পারবে না।’ জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার দলের লোকজন বিদেশে বসে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় ফিরে আসতে নানারকম ষড়যন্ত্র করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এজন্য দেশপ্রেমিক সবাইকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে কোনো শক্তি কিছু করতে পারবে না।