
কক্সবাজারের মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য আমদানি করা কয়লার চালানে বিপুল পরিমাণ কাদামাটি পাওয়া গেছে। এই কয়লা সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে মেঘনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইউনিক সিমেন্ট। বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো স্পর্শকাতর কাজে মাটিমিশ্রিত কয়লা কেন সরবরাহ করল মেঘনা গ্রুপ, তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটিতে বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন-১) মোহাম্মদ সানাউল হককে আহ্বায়ক করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (উন্নয়ন-৫) মোহাম্মদ হোসেন পাটোয়ারী এবং বিপিডিবির উপপরিচালক (বেসরকারি প্রকল্প) মো. নাজমুল হক। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নমানের এই কয়লা ব্যবহার করলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে ৬৩ হাজার টন কয়লার বিশাল এই চালানটি ফিরিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কম্পানি (সিপিজিসিবিএল)। সিপিজিসিবিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, টেন্ডারের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা সংগ্রহের দায়িত্ব পাওয়া মেঘনা গ্রুপের কম্পানি ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং ভারতের আদিত্য বিরলা গ্লোবাল ট্রেডিং কম্পানি পিটিই (সিঙ্গাপুরের রেজিস্টার্ড) এই চালান পাঠায়। কিন্তু চালানটির কয়লায় বিপুল পরিমাণ মাটি ছিল। ফলে এই কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহারোপযোগী নয়। ৬৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে জাহাজটি বন্দরে এলে প্রায় ২০ হাজার টন কয়লা খালাস করা হয়। কিন্তু এসব কয়লা খালাস করতে গিয়ে দেখা যায়, কয়লার সঙ্গে কালো রঙের কাদামাটি। স্বাভাবিকভাবে কয়লা কালো ও শুকনা থাকে। কিন্তু আমদানি করা কয়লার সঙ্গে কাদামাটি মিশ্রিত আর ভেজা। তাই এসব কাদামাটি খালাস না করে ফেরত পাঠিয়েছে সরকারি এই সংস্থাটি।
সিপিজিসিবিএল সূত্রে জানা গেছে, ৬৩ হাজার টন কয়লা নিয়ে গত ১৭ মার্চ ‘এমভি ওরিয়েন্ট অর্কিড’ নামের সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী একটি জাহাজ মাতারবাড়ী বন্দরের চ্যানেলে প্রবেশ করে। ২১ মার্চ জাহাজ থেকে কয়লাগুলো খালাস করেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা। খালাস করার সময় দেখা যায়, কয়লায় প্রচুর পরিমাণে মাটির মিশ্রণ রয়েছে। অথচ চুক্তি ছিল, ইন্দোনেশিয়া থেকে উচ্চমানের কয়লা সরবরাহ করবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি। ফলে কয়লা খালাসকালে বারবার আনলোডিং কনভেয়ার বেল্টে আটকে যাচ্ছিল। তখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা জাহাজ থেকে কয়লা খালাস বন্ধ করে দিয়ে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেন। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, সরবরাহকারী মাটিমিশ্রিত নিম্নমানের কয়লা দেওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
অভিযোগ উঠেছে, জাহাজটির ব্যবহার অনুপযোগী কয়লা যেকোনোভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে গছিয়ে দিতে ব্যাপক তদবির চালানো হচ্ছে। এ কারণে জাহাজটি সাগরের দূরবর্তী স্থানে না পাঠিয়ে কাছাকাছি রাখা হয়েছে। বন্দর ও কয়লাবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট লোকজন জানিয়েছেন, আমদানি করা প্রতি টন কয়লার দাম পড়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। ভারতীয় কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইন্দোনেশিয়া থেকে ভালো মানের কয়লা সরবরাহ করার কথা থাকলেও মাটি মেশানো ও ভেজা কয়লা সরবরাহ করে আসছিল। কয়লাবাহী জাহাজটি পরিচালনায় রয়েছে মেঘনা গ্রুপ অব কম্পানি।
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর দুটি ইউনিটই সার্বক্ষণিক চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতি মাসে যেখানে চারটি জাহাজ ভর্তি করে কয়লা আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তখনই ঘটেছে এমন ঘটনা। এমনিতে শীত বিদায় নেওয়ার পর দেশব্যাপী তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ছে বিদ্যুতের। চাহিদা পূরণের জন্য কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে নিরবচ্ছিন্নভাবে দুটি ইউনিট চালুর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন রীতিমতো বিপাকে পড়েছে।