
অন্যান্য বছরের মতো উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন প্রধান লক্ষ্য না করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই আসছে বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য চলমান আর্থিক সংকটের ধাক্কা সামলাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছোট করা হবে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ। মেয়াদের সাত মাসে এসে অন্তর্বর্র্তী সরকার অনুভব করছে- আসছে বাজেটটা চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ছোট করা হলে আর্থিক চাপ কমবে। তাতে অর্থের সংস্থান পেতে এবং বাজেট বাস্তবায়ন করতে অপেক্ষাকৃত কম বেগ পেতে হবে। আকার ছোট হলে ঘাটতি কমাতেও সহায়ক হবে। এজন্য নতুন করে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হবে না। পুরোনো এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাছাই করে জরুরি, অজরুরি নির্ধারণ করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে আনতে চাই। এ ছাড়া বৈষম্য কমাতে ও কর্মসংস্থান বাড়ানোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হবে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ধরা হয় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধন করে তা সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার মধ্যে নামিয়ে অনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা করা হয়েছিল।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা থাকবে বাজেটে। টানা ১০ মাস পর মূল্যস্ফীতি গত মাসে ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এর আগে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরেই অবস্থান করেছে। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান লক্ষ্য রেখেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।
আসছে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় চলমান ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হবে। কৃষি খাতে ভর্তুকি অব্যাহত থাকবে। শিল্প ও ব্যবসাবাণিজ্যবান্ধব উদ্যোগ নেওয়া হবে। নতুন করে করপোরেট করসহ কোথাও করের হার না বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে অর্থ বিভাগ। তবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য করের আওতা বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেছেন, কর আদায়ের পাশাপাশি করজাল বৃদ্ধিতে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এজন্যই টিআইএনধারীর সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। আমরা আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে করজালের আওতায় আনতে চাই।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাত্র চার মাসেরও কম সময় বাকি আছে। অথচ এ সময়ে আয়কর, শুল্ক-কর আদায় খুব একটা বাড়েনি। বিদেশি সহায়তার ঋণ পরিশোধেও বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের বাজেটের আকার বড় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী বাজেট হতে পারে চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেটের কম।
বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনা শুরু করেছেন অর্থ উপদেষ্টা এবং এনবিআর চেয়ারম্যান। গত সপ্তাহে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানেও বাজেট ছোট রাখতে সুপারিশ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ৫১ হাজার কোটি টাকা। আসছে বছরে কর আদায় আরও কম হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে অনেক ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্প উদ্যোক্তারাও রয়েছেন উৎকণ্ঠার মধ্যে। ফলে আগের বছরের চেয়েও রাজস্ব আদায় কম হবে সামনের বছরে। এ জন্য বাজেটের আকার বাড়ালে শুধু ঘাটতিই বাড়বে। এতে বাজেটের সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।